অ্যান্টার্কটিকার কাছে বরফে ঢাকা, জনমানবশূন্য এক সারি আগ্নেয়গিরি দ্বীপ, যেখানে শুধুই পেঙ্গুইনের বসবাস। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই দ্বীপগুলোর পণ্য আমদানির ওপরেও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার অধীনস্থ বাইরের অঞ্চলগুলোর মধ্যে থাকা হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপ পৃথিবীর অন্যতম দুর্গম স্থান। দেশটির পশ্চিম উপকূলের পার্থ শহর থেকে সমুদ্রপথে সেখানে পৌঁছাতে দুই সপ্তাহ লাগে।
এসব দ্বীপ একেবারেই জনশূন্য। ধারণা করা হয়, প্রায় এক দশক আগে সর্বশেষ কেউ সেখানে গিয়েছিলেন।
তবুও, হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপকে হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত নতুন শুল্ক আরোপের তালিকায় ‘দেশ’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজে বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো ভূখণ্ডই নিরাপদ নয়।’
এই দ্বীপ দুটি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার আরও কয়েকটি বাইরের অঞ্চল পৃথকভাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার ফলে এসব অঞ্চলের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে।
অস্ট্রেলিয়ার বাইরের অঞ্চলগুলো মূল ভূখণ্ডের অংশ হলেও তারা স্বায়ত্তশাসিত নয়, বরং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক বজায় রাখে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক তালিকায় থাকা এমন অন্যান্য অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে কোকোস (কিলিং) দ্বীপপুঞ্জ, ক্রিসমাস দ্বীপ ও নরফোক দ্বীপ।
তবে সবচেয়ে বেশি শুল্কের শিকার হয়েছে নরফোক দ্বীপ, যেখানে জনসংখ্যা মাত্র ২ হাজার ১৮৮ জন। সিডনি থেকে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত দ্বীপটির পণ্য আমদানির ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে, যা মূল অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশি।
২০২৩ সালে নরফোক দ্বীপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৬ লক্ষ ৫৫ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। এর মধ্যে প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল ৪ লক্ষ ১৩ হাজার ডলারের চামড়ার জুতা।
তবে নরফোক দ্বীপের প্রশাসক জর্জ প্ল্যান্ট এই তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘নরফোক দ্বীপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রপ্তানি নেই এবং এখানে কোনো শুল্ক বা বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার কথাও জানা নেই।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজে আরও বলেন, ‘নরফোক দ্বীপের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত নই যে নরফোক দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অর্থনীতির কোনো প্রতিযোগী হতে পারে। তবে এটি প্রমাণ করে যে পৃথিবীর কোনো স্থানই এখন নিরাপদ নয়।’
এর চেয়েও রহস্যজনক তথ্য পাওয়া গেছে হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপের রপ্তানি নিয়ে। এই অঞ্চলটিতে মাছ ধরার ব্যবস্থা থাকলেও কোনো স্থাপনা বা মানব বসতি নেই।
বিশ্ব ব্যাংকের রপ্তানি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চল থেকে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছিল। এর বেশিরভাগই ছিল ‘যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী’। তবে এই পণ্যগুলো আসলে কী, তা স্পষ্ট নয়।
গত পাঁচ বছরে হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ বছরে ১৫ হাজার থেকে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার ডলারের মধ্যে ছিল।
খবর: টিবিএস