chardike-ad

সম্প্রতি ইয়েমেনে সামরিক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি গোপন আলোচনা ফাঁস হয়েছে। কারণ ওই আলোচনা সংক্রান্ত গ্রুপ চ্যাটে ভুল করে এক সাংবাদিককে যুক্ত করা হয়েছিল। বিষয়টি হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করার পর, ট্রাম্প প্রশাসন রাজনৈতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে। সোমবার (২৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ওই সাংবাদিক দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গ। ভুল করে তাকে ব্যক্তিগত সিগন্যাল গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত করা হয়েছিল।

জেফরি গোল্ডবার্গ জানিয়েছেন, তিনি সিগন্যাল মেসেজিং অ্যাপে এমন একটি গ্রুপে যুক্ত হন, যেখানে ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথসহ জাতীয় নিরাপত্তার শীর্ষ কর্মকর্তারা ছিলেন।

গোল্ডবার্গ আরও বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীর হুথি বিদ্রোহীদের ওপর হামলার জন্য নির্ধারিত অস্ত্রের তালিকা, লক্ষ্যবস্তু এবং সময়সূচি দেখতে পান, যা হামলার দুই ঘণ্টা আগেই গ্রুপ চ্যাটে আলোচনা করা হয়।

গোল্ডবার্গ জানান, তিনি হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজের কাছ থেকে একটি সংযোগ অনুরোধ পাওয়ার পর গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত হন। সম্ভবত ভুলবশত এই অনুরোধটি আসে।

পরে পিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যদি তারা ভুল করে কারও ফোন নম্বর বেছে নিতেই হয়, তাহলে অন্তত এটা ভালো যে, সেই ব্যক্তি হুথিদের সমর্থক ছিলেন না। কারণ তারা এমন তথ্য ভাগ করে নিচ্ছিলেন, যা আমার বিশ্বাস, অভিযানে যুক্ত মার্কিন সেনাদের জীবন বিপন্ন করতে পারত।

গত ১১ মার্চ আটলান্টিক সম্পাদক গোল্ডবার্গ তার প্রতিবেদনে লেখেন, তিনি সিগন্যাল অ্যাপে একটি সংযোগ অনুরোধ পান, যা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ওয়াল্টজের বলে মনে হয়েছিল।

তিনি প্রথমে ভাবেন, এটি হয়তো কোনও ধোঁকাবাজি। তবে চারদিন পর, ১৫ মার্চ শনিবার তিনি একটি সুপারমার্কেটের পার্কিং লটে বসে সিগন্যাল চ্যাটের মাধ্যমে ইয়েমেনে হামলার পরিকল্পনা দেখেন।

তখন তিনি এক্স খুলে ইয়েমেন সম্পর্কিত আপডেট চেক করেন আর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। কারণ সানায় বিস্ফোরণের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল।

দুই দিন পর গোল্ডবার্গ জানান, তাকে হুথি পিসি স্মল গ্রুপ নামক একটি সিগন্যাল চ্যাটে যুক্ত করা হয়। তিনি দেখতে পান, ১৮ সদস্যের এই গ্রুপ চ্যাটে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ, সিআইএ পরিচালক জন র‌্যাটক্লিফ, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এতে যুক্ত ছিলেন।

গোল্ডবার্গ দাবি করেন, চ্যাটে থাকা জেডি ভ্যান্স নামের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

সোমবার বিকেলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, তিনি আটলান্টিকের প্রতিবেদনের বিষয়ে অবগত নন।

হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, হুথিদের ওপর চালানো হামলাগুলো অত্যন্ত সফল ও কার্যকর হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার জাতীয় নিরাপত্তা টিমের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথও সামরিক অভিযানের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এটি সফল হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের চাপের মুখে তিনি গোল্ডবার্গকে ‘বিভ্রান্তিকর ও অত্যন্ত অবিশ্বস্ত’ সাংবাদিক হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং চ্যাটের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনের এই প্রতিবেদন ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি করেছে। কয়েকজন রিপাবলিকানের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান মাইক জনসন, এই ঘটনাটিকে ‘ভুল’ বলে স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, শীর্ষ কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছিলেন।

ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন এবং এটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর চাক শুমার বলেন, এটি সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের সবচেয়ে বিস্ময়কর ফাঁসগুলোর মধ্যে একটি।

সিগন্যাল সাধারণত সাংবাদিক এবং ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন। কারণ এটি নিরাপদ যোগাযোগের সুযোগ দেয়, ছদ্মনাম ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা মুছে ফেলার ফিচার রয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ আটলান্টিকের প্রতিবেদনের বেশিরভাগ অংশ নিশ্চিত করেছে।