ইয়েমেনের ইরান-সমথিত হুথিদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। লোহিত সাগরে জাহাজে হামলার জবাবে শনিবার (১৫ মার্চ) এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলায় বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৯ জন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে শনিবার শুরু হওয়া এই হামলা কয়েক দিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহও চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ইরান দ্বারা অর্থায়িত হুথি সন্ত্রাসীরা আমাদের বিমানবাহিনীর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং আমাদের সেনা ও মিত্রদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, তাদের ডাকাতি, সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ কয়েক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে এবং বহু মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় বিদেশি জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করা হুথি গোষ্ঠী জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব দেবে।
শনিবারের হামলাগুলো হ্যারি এস. ট্রুম্যান এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে উড্ডয়নকারী যুদ্ধবিমান দিয়ে পরিচালিত হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনী পরিচালনাকারী সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে বলেছে, এই হামলা ইয়েমেনজুড়ে বৃহৎ সামরিক অভিযানের সূচনা মাত্র।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও কঠোর সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, আমেরিকান জাহাজের ওপর হুথি হামলা সহ্য করা হবে না। আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ধ্বংসাত্মক মারাত্মক শক্তি প্রয়োগ করবো।
হুথি নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, হামলায় ইয়েমেনের রাজধানী সানায় অন্তত ১৩ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ জন আহত হয়েছেন।
হুথি-নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় সাদা প্রদেশে মার্কিন হামলায় চার শিশু ও এক নারীসহ অন্তত ১১ জন নিহত এবং আরও ১৪ জন আহত হয়েছেন।
হুথিদের রাজনৈতিক দপ্তর এসব হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, আমাদের ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী যে কোনও মাত্রার হামলার পাল্টা জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
সানার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হামলায় হুথিদের শক্ত ঘাঁটি লক্ষ্য করা হয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল্লাহ ইয়াহিয়া রয়টার্সকে বলেছেন, বিস্ফোরণগুলো ছিল প্রচণ্ড, যেন ভূমিকম্প হয়েছে। আমাদের নারী ও শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল।
সাদা প্রদেশের দাহিয়ান শহরের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে মার্কিন হামলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে আল-মাসিরাহ টিভি জানিয়েছে।
গত এক দশকে ইয়েমেনের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সশস্ত্র হুথি গোষ্ঠী ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে উপকূলের কাছে বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এতে বৈশ্বিক বাণিজ্যে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী বিপুল ব্যয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করতে বাধ্য হয়েছে।
পেন্টাগনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ২০২৩ সাল থেকে হুথিরা মার্কিন যুদ্ধজাহাজের ওপর ১৭৪ বার এবং বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর ১৪৫ বার হামলা চালিয়েছে।
হুথিরা বলছে, গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মূলত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
হুতিদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরানকেও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। বলেছেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেয় ‘আমেরিকা তোমাকে সম্পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনবে। এটা কিন্তু তোমাদের জন্য ভালো হবে না।’
এমন এক সময়ে এই হামলা শুরু হলো, যখন নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে তেহরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন। কয়েক দিন আগে ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে চিঠি পাঠিয়ে দেশটির পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু বুধবার খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি মার্কিন হামলার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনও অধিকার নেই বা ক্ষমতা নেই ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের গণহত্যা ও সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করুন। ইয়েমেনিদের হত্যা বন্ধ করুন।
তেহরানের জাতিসংঘ মিশন এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেনি।