দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের বড় অংশ এখন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব ব্যাংকই লুটেরাদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়। এসব ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে বিদেশে পাচার করেছেন কয়েকজন ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক গ্রুপ। যার প্রভাবে ধুঁকছে দেশের অর্থনীতি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণে ‘ইসলামী ব্যাংকিং রেগুলেশন্স অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট’ নামে নতুন বিভাগ গঠন করেছে। প্রাথমিকভাবে ২২ জন কর্মকর্তা দিয়ে গঠিত এই বিভাগই এখন থেকে ইসলামী ব্যাংকের যাবতীয় নীতিমালা ঠিক করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ এক প্রজ্ঞাপন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের সংখ্যা ১০টি। এ ছাড়া প্রচলিত ব্যাংক তাদের ৩৩টি শাখা ও ৬৮৮টি উইন্ডোর মাধ্যমে শরিয়াহভিত্তিক সেবা দিয়ে থাকে। দীর্ঘদিন থেকেই এসব শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের নীতিমালা তৈরিতে আলাদা বিভাগ করার দাবি উঠছিল। এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই পথেই হেঁটেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ইসলামী ব্যাংকিং রেগুলেশন্স অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের কাজ হবে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠন, প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং শাখা বা উইন্ডো (বিশেষ শাখা) খোলা এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মনীতি তৈরি করা। একই সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কিত বিভিন্ন নিয়ম ও নীতিমালা তৈরি করা, আগের নীতিমালা সংশোধন, পরিবর্তন বা হালনাগাদ এবং অন্যান্য বিভাগ থেকে চাওয়া মতামত প্রদান ও গ্রহণ করা। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকিং সেবা আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এই বিভাগ। যেমন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ, প্রশিক্ষণ এবং আরও কার্যকর ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা তৈরি করা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসাইন খান কালবেলাকে বলেন, আগে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর নীতিমালা ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর নীতিমালা একই বিভাগ থেকে তৈরি করা হতো। কিন্তু আমরা চিন্তা করেছি, এখন যেহেতু ইসলামী ধারার ব্যাংকের পরিধি ও সংখ্যা বাড়ছে, সেজন্য আলাদা বিভাগ গঠন দরকার। এজন্যই নতুন বিভাগ করা হয়েছে। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ইসলামী ধারার ব্যাংকের ওপর অভিজ্ঞ কর্মকর্তারাই শরিয়াহ বিধান মেনে নীতিমালা তৈরি করবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নতুন বিভাগ ইসলামী ব্যাংকিং এবং অর্থায়ন সম্পর্কিত নিয়ম ও নীতিমালা তৈরি করা এবং এগুলো যাতে সঠিকভাবে চালু হয়, সেজন্য বিভাগের অন্যান্য শাখার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। ইসলামিক ফিন্যান্স স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ডের (আইএফএসবি) নিয়মনীতি এবং স্ট্যান্ডার্ড পর্যালোচনা করা ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। আইএফএসবির কাউন্সিল, টেকনিক্যাল কমিটি, এক্সিকিউটিভ কমিটি, পিএসআইএফআই (প্রুডেনশিয়াল অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল ইসলামিক ফাইন্যান্স ইন্ডিকেটরস) টাস্কফোর্সের পূর্ব ও পরবর্তী ডকুমেন্টগুলো পর্যালোচনা করা এবং সেগুলোর ওপর মতামত দেওয়া। এ ছাড়া আইএফএসবির সভাগুলো আয়োজন করা, তাদের সার্ভে কাজে সহায়তা দেওয়া ও তাদের কার্যক্রমে মতামত প্রদান করা। আন্তর্জাতিক ইসলামী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং তাদের নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ডগুলো বাস্তবায়নে কাজ করাও হবে এই বিভাগের কাজ। প্রাথমিকভাবে একজন পরিচালক, তিনজন অতিরিক্ত পরিচালক, পাঁচজন যুগ্ম পরিচালকসহ মোট ২২ জন কর্মকর্তা দিয়ে এই বিভাগের কার্যক্রম শুরু হবে।
আরও দুই বিভাগ গঠন: এদিকে, পরিদর্শন পরিপালন বিভাগ ও পরিদর্শন বিভাগ-৯ নামে আরও দুটি বিভাগ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ যে রিপোর্ট দেয় তার মধ্যে যেসব সুপারিশ থাকে সেগুলো বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ; পরিদর্শন শেষে সুপারিশগুলো সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো; পরিদর্শন কার্যক্রমের পরিপালন নিশ্চিত করতে নতুন নীতিমালা তৈরি বা পুরোনো নীতিমালা সংশোধন ও হালনাগাদ হবে পরিদর্শন পরিপালন বিভাগের প্রধান কাজ। এ ছাড়া যদি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো নির্দেশনা মেনে না চলে, তাহলে বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা; প্রয়োজন হলে পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা আয়োজন করা; ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি কোনো অতিরিক্ত কাজের নির্দেশ দেয় তা বাস্তবায়ন এবং পরিদর্শন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পক্ষ থেকে পরিদর্শন পরিপালন বিভাগে রিপোর্ট নিয়ে পরিপালন কার্যক্রম সম্পাদন করা।
আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিদর্শন আরও শক্তিশালী করতেই পরিদর্শন বিভাগ-৯ নামে নতুন বিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে।