ক্ষমতাচ্যুতির ৬ মাসের মাথায় দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে নামার পরিকল্পনা নিয়ে ৯ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী তকমা পাওয়া আওয়ামী লীগ।
দলটির মাঠে নামার পরিকল্পনাকে অন্তর্বর্তী সরকারসহ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরব থাকা রাজনৈতিক দলগুলো ভালোভাবে নেয়নি। প্রত্যেকেই আলাদাভাবে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রতিহত করার কৌশল গ্রহণ করছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিষয়ে কঠোর ড. ইউনূস সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি-জামায়াতেরও লক্ষ্য তাদের ঘোষিত কর্মসূচি বানচাল করা।
এ প্রসঙ্গে বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে দলীয় যেকোনো কর্মসূচি নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ চলছে। বাস্তবতার নিরিখেই এ বিরোধ ঘটছে। কোনো কোনো ব্যাপারে ঐকমত্য হলেও অনেক ব্যাপারেই ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যম ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের ঘোষিত ফেব্রুয়ারির ৯ দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট ও প্রচারপত্র বিলি। ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল-সমাবেশ। ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ সমাবেশ। ১৬ ফেব্রুয়ারি সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ ও আকাশপথ অবরোধ। ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল।
অন্তর্বর্তী সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষ ৯ দিনের এ কর্মসূচি প্রতিহত করার উদ্যোগ ইতিমধ্যে গ্রহণ করলেও, আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেই কর্মসূচি নিয়ে তেমন কোনো আকর্ষণ বা আবেদন নেই। এ নিয়ে অন্তত দেড় ডজন কর্মী- সমর্থকের সঙ্গে দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের মতে, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের প্রায় সব নেতাই দেশত্যাগ করেছেন। আত্মগোপনে আছেন অনেকেই। কর্মসূচি নিয়ে মতবিরোধ আছে নেতাদের অনেকের মধ্যেই। তাছাড়া, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের প্রধান ছাড়া আর কোনো নেতার প্রতি আস্থা-বিশ্বাস নেই দেশে থাকা কর্মী-সমর্থকদের।
জানা গেছে, দেশে থাকা অসংখ্য কর্মী-সমর্থক ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে সন্দিহান; তারা নানা অনিশ্চয়তা ও প্রতিবন্ধকতার কথা বলেছেন। শীর্ষ নেতাদের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ কর্মসূচির প্রতি আকর্ষণহীন ও আবেদনহীন করে তুলেছে কর্মী-সমর্থকদের।
কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগের কর্মসূচির সামনের সারিতে কারা থাকবেন এ প্রশ্ন তাদের মধ্যে রয়েছে। সত্যিই এ কর্মসূচি আওয়ামী লীগের প্রধান ব্যক্তিটি ডেকেছেন কি না, এ প্রশ্নও দেশে থাকা কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি ঘোষিত কর্মসূচি সফল করে তোলার জন্য কতটা উপযুক্ত তা নিয়েও কর্মী-সমর্থকরা সন্দেহ পোষণ করছেন। ফেব্রুয়ারি মাস বেছে নেওয়া হলো কেন তা নিয়েও সন্দেহ করছেন তারা। দলীয় প্রধানের আহ্বান ছাড়া অন্য কোনো নেতার ডাকে নামবেন না বলে এক ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন দেশে থাকা ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা। কর্মসূচি ঘিরে যে অর্থের প্রয়োজন তার জোগান দেবে কারা? কারণ, কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনার জন্য টাকাওয়ালা নেতারা দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। তাদের বক্তব্য, এসব না ভেবে কর্মসূচি দিলেই সফল হয়ে যাবে তা ভাবার কোনো কারণ নেই।
জানা গেছে, গত বুধবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে একটি জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতির বাতচিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নানককে লিফলেট ছাপানোর ব্যাপারে খরচ পাঠানোর কথা বলেন ওই নেতা। পরে কলকাতা থেকে এগুলো ছাপানোর ব্যবস্থা করে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়। জেলা সভাপতি বলেন, ‘লিফলেট-পোস্টার ছাপিয়ে পাঠান আমি সারা দেশে সরবরাহ করব।’ একপর্যায়ে উভয় নেতা বাগবিতণ্ডায় জড়ালে মোবাইল সংযোগ কেটে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা লিফলেট-পোস্টার ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ নিলে ঢাকার বিভিন্ন ছাপাখানার মালিকরা অসহযোগিতা করেছেন। ঢাকার বাইরে থেকে ছাপানোর চেষ্টা করা হলে বড় অঙ্কের আর্থিক জোগান লাগছে। এ কাজে দেশে আত্মগোপনে থাকা বা বিদেশে পলাতক থাকা কোনো নেতাই এগিয়ে আসছেন না। ফলে লিফলেট-পোস্টার বিতরণের কাজে বেগ পেতে হচ্ছে। লিফলেট-পোস্টার ছাপানো এবং তা বিলি করার কর্মসূচি সফল হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এনামুল হক প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লিফলেট ছাপাতে ছাপাখানার মালিকদের দরজায় দরজায় ঘুরছি, তারা কেউ সহযোগিতা করছেন না। অনেক কষ্টে হাজার তিনেক লিফলেট-পোস্টার ছাপানোর ব্যবস্থা করা গেছে।’
মাঠের কর্মী-সমর্থকরা দাবি করেন, কর্মসূচি ঘোষণা করলেও মসলাপাতি, বাজার খরচের অর্থসংকট রয়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কর্মীদের খোঁজ নিচ্ছেন না। কর্মসূচি পালনে যে আর্থিক খরচ প্রয়োজন, সেটাও সরবরাহ করছেন না। কিছু পাগলা কর্মী-সমর্থক চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও ঢাকার প্রায় সব ছাপাখানার অসহযোগিতামূলক আচরণ তাদের মনোবলহারা করে তুলছে।
কর্মসূচি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জিয়াউদ্দিন শিপু লেখেন, ‘যারা এখনো ভাইয়ের রাজনীতিতে আছেন তারা দয়া করে বাদ দেন, অনেক হয়েছে। ভাইদের জন্য দোয়া করেন, তারা যেন বিদেশে ভালো থাকেন।’