স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যাসিবাদের সরকারের পতনের পরে যেই পরাশক্তিগুলো এটাকে গ্রহণ করতে পারেনি, মেনে নিতে পারেনি, তারা আমাদের বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।’
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, এই সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য ও অ্যাজেন্ডা হচ্ছে সংস্কার কার্যক্রম। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে ধ্বংস করেছে। আর্থিক ব্যবস্থা থেকে সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। আমরা সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চল সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি বলতে চাই, আগামী বাংলাদেশে আর কোনও বৈষম্য থাকবে না, উন্নয়ন কার্যক্রমে বঞ্চিত হবে না কেউ। অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটানোর জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা দ্রুত হোক। কারণ, আপনারা জানেন যে জনপ্রতিনিধি ছাড়া সরকারি অফিসারদের দিয়ে যে নাগরিকসেবার প্রয়োজন সেগুলো সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব হয় না। নাগরিকরা অনেক ধরনের হয়রানির শিকার হয়, সময় ক্ষেপণ হয় এবং নাগরিকসেবা ঠিকমতো পায় না। এই চ্যালেঞ্জটা আমাদের এখন ফেস করতে হচ্ছে। আমাদের অফিসাররা একেকজন অনেক অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। আমি চাই যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা খুব দ্রুত হোক। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটা সিদ্ধান্ত হলে আমরা হয়তো খুব দ্রুত একটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে পারবো।’
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘এখনও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন অফিসে, ভূমি অফিসে, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিদের নাকি টাকা না দিলে কাজ হয় না। আপনাদের আগে সংশোধন হতে হবে। এরপরও যদি এ ধরনের কোনও অভিযোগ আসে তাহলে প্রমাণসহ আমাদের কাছে অভিযোগ করেন আমরা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আটোয়ারীতে এখনও কোনও মিনি স্টেডিয়াম নেই। পঞ্চগড়ে কোনও শিল্পপ্রতিষ্ঠান নেই, কোনও ইপিজেড নেই। এগুলো বাস্তবায়ন করতে আমি উপদেষ্টার কাছে আবেদন জানাই। পঞ্চগড়ে এখনও সারের সংকট রয়েছে। আমি উপদেষ্টা মহোদয়কে অনুরোধ করবো, শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে পঞ্চগড়ে সারের বরাদ্দ বেশি করে দেওয়ার জন্য। যাতে করে কোনও সংকট না হয়।’
আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাফিউল মাজলুবিন রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, আটোয়ারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ জে এম বজলার রহমান, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ইউনুস আলী খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল কাদের, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) কনক কুমার দাস, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।