Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে লাঞ্ছনায় জড়িতরা শনাক্ত, ধরা পড়েননি কেউ

 

chardike-ad

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। তবে আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জড়িত কেউ আটক হননি। জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করেন একদল লোক। রাতে এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার ছেলে এবং উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, তাঁর বাবাকে নির্যাতনকারীরা সবাই স্থানীয় জামায়াত ও শিবিরের রাজনীতি করেন। ভিডিওতে তাঁদের সবাইকে দেখা গেছে। জুতার মালা পরানোর পর যে দুজন তাঁর বাবার দুই হাত ধরে টানাহেঁচড়া করেছেন এঁরা হলেন কুলিয়ারা গ্রামের আবুল হাশেম ও অহিদুর রহমান। তাঁদের দুজনই জামায়াতের সমর্থক। লাঞ্ছিতকারীরা কমপক্ষে ২০ জন ছিলেন। আবুল হাশেম ও অহিদুরের সঙ্গে এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় জামায়াত ও শিবিরের কর্মী-সমর্থক পেয়ার আহমেদ, রাসেল, শহীদ, এমরান হোসেন, ফরহান হোসেন, কামরান হোসেনসহ কয়েকজন।

অভিযুক্ত সবাই ঘটনার পর এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ জন্য তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আবুল হাশেম তাঁদের দলের কোনো পদে নেই। ঘটনাস্থলে কোনো সমর্থক কিংবা অনুসারী হয়তো থাকতে পারেন, কিন্তু কোনো নেতা–কর্মী সেখানে ছিলেন না। এ ছাড়া এ ঘটনা কোনো রাজনৈতিক বিষয় না। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা মেনে নেওয়ার মতো নয়। তবে জামায়াতের বিষয়ে যেভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে, তার নিন্দাও জানান তিনি।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তার উজ জামান সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমকে বলেন, যাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের ভিডিও দেখে শনাক্ত করা গেছে। তাঁদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা থানায় এসেছেন, তাঁরা জানতে চেয়েছেন, নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা মামলা দিলে পুলিশ গ্রহণ করবে কি না। তিনি বলেছেন, মামলা অবশ্যই গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা যে দলেরই হোন না কেন, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের নির্দেশনা পেয়েছেন বলেও জানান।

ওই ঘটনার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দিয়ে দেখা যায়, দুজন জুতার মালা পরা অবস্থায় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে টানাহেঁচড়া করছেন। তাঁকে লাঞ্ছিত করা ব্যক্তিদের একজনই পুরো ঘটনার ভিডিও করেছেন। এ সময় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা বারবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান।

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিউল আলম বাবুল বলেন, ‘আবদুল হাই কানু মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। তিনি আওয়ামী লীগ করেও বিগত সময়ে মিথ্যা মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন, কারাগারে গেছেন। তিনি যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু সেটা না করে তাঁকে যারা এভাবে লাঞ্ছিত করেছে, তাদের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছি।’

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার প্রমথ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বিজয়ের মাসে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে অপমান-লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তাঁরা অবাক হয়েছেন। তাঁরা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করবেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধারা। অভিযুক্তদের বিচার করতে হবে। এ ঘটনায় পুরো জাতি আজ লজ্জিত।

 

সূত্র: প্র.আ