গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য শনিবার রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয়েছে কনসার্ট ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’। বিকেল ৪টার দিকে ব্যান্ড সিলসিলার কাওয়ালি গানের মাধ্যমে কনসার্টটি শুরু হয়। শেষ হয় পাকিস্তানের খ্যাতিমান শিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খানের গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।
কনসার্টে ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভাও। তাতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করার ডাক দেন বক্তারা। এসময় আর্মি স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারাও সমস্বরে শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে।
যৌথভাবে এই কনসার্টের আয়োজন করে ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম ও স্কাইট্র্যাকার লিমিটেড। কনসার্টটির আয়োজন করা হয়েছে জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। কনসার্ট থেকে সংগৃহীত সমস্ত অর্থ শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের কল্যাণে কাজ করা সংস্থা ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এ প্রদান করা হবে।
কনসার্টে বক্তব্য রাখেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বেশ কয়েকজন অগ্রনায়ক ও আন্দোলনে আহত কয়েকজন কর্মী। তারা প্রত্যেকেই দেশের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেন। কনসার্টে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর সিইও মীর মাহাবুবুর রহমান, আন্দোলনে এক হাত হারানো গাজী আতিকুল ইসলাম, মুখে গুলি লেগে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ, শহীদ আহনাফের মা এবং শহীদ সৈকতের বোন।
সারজিস আলম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান-২৪–এ দুই হাজার শহীদ হন। অর্ধলক্ষ আহত হন। নতুন এই বাংলাদেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ভার অনুভব করছি।’ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, ‘দেশের ও মানুষের স্বার্থে জীবন ও রক্তদানকারী ভাই–বোনদের স্বার্থে রাজনৈতিক বিভাজনের সৃষ্টি করবেন না। সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশ ও দেশের মানুষকে রাখবেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের কোনো চিহ্ন এ দেশে থাকবে না।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘খুনি হাসিনা স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষদের হয় দালাল, না হয় দাস বানিয়েছে, নয়তো নিশ্চুপ করিয়ে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন সত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হাসিনা স্বৈরাচার শাসন টিকিয়ে রাখতে পুলিশকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন। তাই জনগণের আস্থা ফিরে আসে, পুলিশকে এমন কাজ করতে হবে।’
পরে কনসার্টের মঞ্চে ওঠা অন্যদের পরিচয় করিয়ে দেন সারজিস আলম। সঙ্গে ছিলেন আন্দোলনে এক হাত হারানো গাজী আতিকুল ইসলাম, শহীদ মীর মাহফুজুর রহমানের (মুগ্ধ) ভাই মীর মাহাবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ), শহীদ আহনাফের মা এবং শহীদ সৈকতের বোন। ছিলেন মুখে গুলি লেগে আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ।
মীর মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। আহত এবং শহীদেরা ত্যাগের বিনিময়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন দেশের মানুষের দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো। ইংরেজদের মতো আমাদের নিয়ে “ডিভাইড অ্যান্ড রুল” খেলা হচ্ছে। আলাদা করার চেষ্টা হচ্ছে। সবাইকে একত্রে থাকতে হবে। গণ–অভ্যুত্থান যেভাবে সফল করেছি, বাংলাদেশের বিজয় অর্জন করবই।’
গাজী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্বৈরাচার হাসিনা ও তার দোসররা দেশে খুন, গুম, লুট, অর্থ পাচার করেছেন। তাকে ও তার দোসরদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে হত্যা করতে হবে। আমরা মরে যাইনি, এখনো বেঁচে আছি। আমরাই এ দেশে শেখ হাসিনার বিচার করব।’