অপহরণের পর দীর্ঘ তিন মাস ধরে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের পর এক মাদ্রাসা ছাত্রীর চোখ নষ্ট করে দিয়েছে বখাটে। অপহরণকারীর নির্যাতনে আঘাতে তার ডান চোখটি নষ্ট হয়ে গেছে। অস্ত্রোপচারের পর ডাক্তারের দেওয়া ছাত্রীর চোখের কর্ণিয়া এখন বাড়ির ফ্রিজে রাখা আছে।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরী ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরাইল ইউনিয়নের নারায়াণপুর গ্রামের এক কৃষকের কন্যা।
জানা যায়, ওই কিশোরী স্থানীয় মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এ বিষয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে ময়মনসিংহের নারী ও শিশুনির্যাতন ট্রাইব্যুনালে সালিশি (সিআর) মামলা দায়ের করা হলেও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত অপহরণকারীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।
অভিযুক্ত অপহরণকারী একই ইউনিয়নের কুচুরী চরপাড়া গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে মো. হোসাইন (১৯)। সে বাকচান্দা আব্দুস সামাদ অ্যাকাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, হোসাইন ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া ছাড়াও মাদ্রাসা ও প্রাইভেটে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। একপর্যায়ে গত ১ জুন প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় পাপিয়াকে দলবলসহ উঠিয়ে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় নিয়ে যায় অভিযুক্ত হোসাইন। পরে অনেক জায়গায় খোঁজ করেও মেয়েটির সন্ধান পায়নি পরিবার। দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে থানায় গিয়ে কোনো ধরনের আইনি সহায়তা নিতে পারেনি পরিবারটি। পরবর্তীতে ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে অপহৃত ছাত্রীকে বাড়ির সামনে নান্দাইল-হোসেনপুর সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায় হোসাইন।
খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ময়মনসিংহ এবং পরে ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসার সময় বাম চোখ বাঁচাতে আঘাত পাওয়া ডান চোখটি উঠিয়ে ফেলা হয়।
আহত ওই ছাত্রী জানায়, তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নারায়ণঞ্জের একটি এলাকায় রাখা হয়েছিল। প্রতিদিনই চলত যৌন নির্যাতন। বাধা দিলে চালানো হতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। পালানোর চেষ্টা করায় সে আমার চোখ উপড়ে ফেলার জন্য আঘাত করে। পরদিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে নান্দাইলে ফেলে রেখে চলে যায়। আমি এর বিচার চাই।
নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর বাবা জানান, অর্থাভাবে মেয়ের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অন্যদিকে আদালতে দায়ের করা মামলাটির তদন্তকর্মকর্তা একদিন আসলেও পরে আর কোনো খোঁজ-খবর নিচ্ছেনা। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
ময়মনসিংহ পিবিআইয়ের পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মোসলেহ উদ্দিন জানান, পুরো ঘটনা সত্য। এক মাস আগে হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন চেয়ে আবেদন করেছেন তিনি। এখনো প্রতিবেদন না পাওয়ায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারছেন না।