বাংলাদেশের ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের’ অভিযোগ নিয়ে ভারতের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল যখন একাট্টা, এবার নিজদেশের সংখ্যালঘু ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে তারা। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি এবং রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস বাংলাদেশ ইস্যুতে ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে থাকতে চায়।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তো বিজেপির চেয়ে কয়েকধাপ এগিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছেন। এবার সংখ্যালঘু ইস্যুতে মমতার এক মন্ত্রীই বিজেপির তোপের মুখে পড়েছেন।
সংখ্যালঘু ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে কলকাতা পৌরসভার মেয়র ও পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে। ‘ফিরহাদ ৩০’ নামে একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য করেছেন, একদিন মুসলিমরা সংখ্যালঘু থেকে সংখ্যাগুরু হবেন৷ আর এই বক্তব্য মেনে নিতে পারেনি বিজেপি। সমালোচনায় সরব হয়েছে দলটি৷
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ওই অনুষ্ঠানের ভিডিওতে ফিরহাদ হাকিমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা এমন এক সম্প্রদায় থেকে এসেছি, যারা পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশ এবং সারা দেশে ১৭ শতাংশ। অথচ আমাদের ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বলা হয়। তবে আমরা নিজেদের সংখ্যালঘু মনে করি না। কিন্তু আগামী দিনে আমরা আর সংখ্যালঘু থাকব না। এখন আমাদের সঙ্গে অন্যায় হলে, রাস্তায় বিচারের দাবিতে মোমবাতি হাতে মিছিল করি। কিন্তু, এমন দিন আসবে যখন আমরা বিচার দেব। আমাদের সেই জায়গায় পৌঁছতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, যদি আল্লাহর রহমত থাকে এবং শিক্ষা আমাদের সঙ্গে থাকে, তাহলে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাব।’
ফিরহাদ হাকিমের এই বক্তব্যকে ঘিরে বিজেপি নেতৃত্ব তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং কলকাতার মেয়রের বিরুদ্ধে ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উসকে দেওয়া এবং বিপজ্জনক এজেন্ডা প্রচারের’ অভিযোগ এনেছে।
কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতিদের সংখ্যা নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেন ফিরহাদ ৷ তিনি বলেন, ‘কলকাতা হাইকোর্টে সংখ্যালঘু দুই-তিনজন বিচারপতি রয়েছেন । কিন্তু এটা হওয়া উচিত নয়। আমাদেরকে ওই জায়গায় পৌঁছতে দেওয়া হয়নি।আগামীদিনে কলকাতা হাইকোর্টে আমরাই সব থেকে বেশি বিচারপতি হিসেবে থাকব এবং বিচার করব’ ।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘কলকাতার মেয়র, তৃণমূলের ফিরহাদ হাকিমের পক্ষ থেকে একেবারে বিষাক্ত বক্তব্য। তিনি প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উসকে দিচ্ছেন এবং বিপজ্জনক এজেন্ডা প্রচার করছেন।’
বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, ‘হাকিমের কথা কতটা ভয়ংকর ও বিদ্বেষমূলক সেটা ভাবতে হবে। আমরা জানতে চাই তৃণমূলের সকলে কি হুমায়ূন আর হাকিম? দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাখতে হলে, তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে। জনসংখ্যার জোরে ক্ষমতা দখলের কথা ভাবছে। এই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করব।উনি কি ফিরহাদ হাকিমকে মন্ত্রিসভা ও মেয়র পদ থেকে সরাবেন, সেটা জানতে চাই’।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি নেতারা দিনের পর দিন সাম্প্রদায়িক বক্তব্য, আর মুসলিমবিরোধী তীবৃ ঘৃণা ছড়িয়ে এলে তখন আর ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব বজায় থাকে না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভোটের প্রচারণায় মুসলিমদের নিশানা করে বক্তব্য দেন।
এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দেন। অনেকের মতে, অমিত শাহের বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করেই।
আর এখন ফিরহাদ হাকিমের এক বক্তব্যই বিজেপি গলদঘর্ম করতে পারছে না।