Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বইয়েও আসছে পরিবর্তন

 

chardike-ad

নবম-দশম শ্রেণির পাশাপাশি আগামী বছরের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এসব পাঠ্যবইয়ে বেশ কিছুসংখ্যক গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পাচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৪০ কোটি ৩৯ লাখ বই ছাপানো হচ্ছে।

পাঠ্যবইয়ে কিছু সংযোজন-বিয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান।

২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে ২০১২ সালে প্রণয়ন করা পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে জন্য পুরোনো পাঠ্যবইগুলো পরিমার্জন করে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন করে ছাপানোর উপযোগী করা হয়েছে।

এরই মধ্যে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্যবিষয়ক পাঠ্যবইয়ে সাতটি গদ্য ও চারটি কবিতা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর নতুন করে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর লেখা একটি সংকলিত গদ্যসহ মোট দুটি গদ্য। এ ছাড়া একটি উপন্যাস বাদ দিয়ে আরেকটি উপন্যাস যুক্ত করা হচ্ছে। একই শ্রেণির ইংরেজি বই থেকে একটি অধ্যায় বাদ দেওয়া হচ্ছে। সেই বইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি নিয়ে লেখাসহ মোট নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে।

বাংলা বইয়ে যত সংযোজন-বিয়োজন

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ছয়টি প্রবন্ধ নতুন করে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা। বাকি পাঁচটি প্রবন্ধ হলো ‘সবার আমি ছাত্র’, ‘জলপরী ও কাঠুরের গল্প’, ‘নোলক’, ‘কুমড়ো ও পাখির কথা’ এবং ‘দৈত্য ও জেলে’। এই বই থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে সাতটি গল্প। এগুলো হলো ‘ফেব্রুয়ারির গান’, ‘মাটির নিচে যে শহর’, ‘দেখে এলাম নায়াগ্রা’, ‘রৌদ্র রেখে জয়’, ‘মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী’, ‘শহিদ তিতুমীর’ এবং ‘অপেক্ষা’।

এ ছাড়া এই বইয়ের ‘স্মরণীয় যাঁরা চিরদিন’ গল্পের শিরোনাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘স্মরণীয় যাঁরা বরণীয় যাঁরা’।

ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ বইয়ে দুটি গদ্য যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘কার্টুন ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ নামে জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা একটি গদ্য রয়েছে। এ ছাড়া কামরুল হাসানের লেখা ‘আমাদের লোকশিল্প’ গদ্যটি নতুন করে যুক্ত করা হচ্ছে। আর বাদ দেওয়া হয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘কত দিকে কত কারিগর’ গদ্যটি। সংযোজন–বিয়োজনের ফলে এখন এই বইয়ে গদ্যের মোট সংখ্যা হচ্ছে নয়টি। পুরোনো বইয়ে তা ছিল আটটি।

একই পাঠ্যবই থেকে একটি কবিতা বাদ দিয়ে আরেকটি কবিতা যুক্ত করা হচ্ছে। বাদ দেওয়া হয়েছে রোকনুজ্জামান খানের লেখা ‘মুজিব’ কবিতাটি। তবে একই লেখকের ‘চিঠি বিলি’ নামে একটি কবিতা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এই বইয়ে কবিতার মোট সংখ্যা আগের মতো নয়টিই থাকছে।

একই শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বই থেকে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ প্রবন্ধটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সপ্তম শ্রেণির ‘সপ্তবর্ণা’ বই থেকে সেলিনা হোসেনের লেখা ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ গদ্যটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই বইয়ে হাসান রোবায়েতের লেখা ‘সিঁথি’ নামে একটি কবিতা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কবিতা জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা। অন্যদিকে গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের লেখা ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’ এবং সুনির্মল বসুর লেখা ‘সবার আমি ছাত্র’ নামে দুটি কবিতা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ ছাড়া সপ্তম শ্রেণির আনন্দ পাঠ বইয়ে সেলিনা হোসেনের লেখা ভ্রমণকাহিনি ‘সুইজারল্যান্ডের দিনগুলি’ বাদ দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বইয়ে দুটি গদ্য যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো হলো মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’ এবং জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা সংকলিত গদ্য ‘গণ অভ্যুত্থানের কথা’। একই বই থেকে কামরুল হাসানের ‘আমাদের লোকশিল্প’ গদ্যটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। এখন এই বইয়ে মোট গদ্যের সংখ্যা দাঁড়াল ১২। আগে ছিল ১১টি।

একই শ্রেণির আনন্দ পাঠ বই থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা ‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ উপন্যাসটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইংরেজি বইয়ে যেসব পরিবর্তন

ষষ্ঠ শ্রেণির ইংলিশ ফর টুডে বই থেকে ‘সন অব দ্য সয়েল’ এবং ‘মুজিব ইন স্কুল ডেজ’সহ তিনটি লেসন বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ‘আওয়ার প্রাইড’সহ দুটি লেসন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সপ্তম শ্রেণির ইংলিশ ফর টুডে বইয়ে জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা ‘আ নিউ জেনারেশন’ এবং ‘আওয়ার উইনার ইন দ্য গ্লোবাল এরেনা’ নামে দুটি নতুন লেসন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে ‘বঙ্গমাতা: আওয়ার সোর্স অব ইন্সপিরেশন’, ‘বঙ্গবন্ধু’স লাভ ফর স্পোর্টস’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু’স রেসপন্স টু ন্যাচারাল ক্যালামিটিস’ নামে তিনটি লেসন বাদ দেওয়া হচ্ছে। এই বইয়ে একটি লেসন পরিমার্জন করে লেখা হয়েছে।

অষ্টম শ্রেণির ইংলিশ ফর টুডে বই থেকে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড বাংলাদেশ’ নামে একটি লেখা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর দুটি লেখা নতুন করে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা ‘উইমেন’স রোলস ইন আপরাইজিং’। আরেকটি হলো ‘হিউম্যানস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’।

কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যবইয়ে কিছু সংযোজন–বিয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাঠ্যবই পরিমার্জনের সঙ্গে যুক্ত লেখক রাখাল রাহা। তিনি গতকাল গতকাল বলেন, কিছু ক্ষেত্রে বিষয়কে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তিবিশেষকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। এখন তাঁরা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। আবার ইতিহাসের বর্ণনায় কিছু ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন ও অতিকথন ছিল। তা চিহ্নিত করে পরিমার্জন করা হয়েছে। আবার জুলাই গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ঘটনা, তাই ন্যূনতম হলেও এর প্রতিফলন যেন পাঠ্যবইয়ে থাকে, সে জন্য নানা পর্যায় থেকে মত ছিল। সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।