সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দুই যুগের দমনমূলক শাসনের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনের দখল নিয়েছে। এ ছাড়া তার পালানোর খবরে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে অনেকে লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আলজাজিরার সাংবাদিক রেসুল সরদার আতাস জানান, এই মুহূর্তে আমি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের প্রোটোকল গেটে রয়েছি। এখানে আসাদ পরিবার তাদের ভিআইপি এবং রাষ্ট্রীয় অতিথিদের গ্রহণ করতেন। তবে তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর পর দামেস্ক দখল করেছে বিদ্রোহীরা। এরপর তারা প্রাসাদে ঢুকে পড়েছে। বর্তমানে পুরোটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিনি জানান, বিদ্রোহীরা ভেতরে অবস্থান করলেও নিরাপত্তার কারণে তারা কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তারা ভেতরে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালাচ্ছেন। বিদ্রোহীরা দামেস্কে কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করেছেন। তাদের যোদ্ধারা সর্বত্র অবস্থান করছেন এবং বেশ কয়েকটি চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা দিয়েছে। তবে এটি কোনো ঘাটতির কারণে নয়। বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, ইসরায়েল রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে বোমা বর্ষণ করছে। ফলে নিরাপত্তার কারণে তারা লাইট বন্ধ রাখছে।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন- এ খবর প্রকাশ্যে আসার পরই সাধারণ মানুষ প্রাসাদের দিকে ছুটে যায়। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও প্রাসাদে ঢুকে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, তারা আসাদের প্রাসাদ থেকে নানা মূল্যবানসামগ্রী তুলে নিচ্ছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, কেউ বড় ব্যাগ নিয়ে প্রাসাদে ঢুকে তেল, সাবান, শ্যাম্পু, আসবাবপত্র, এমনকি আসাদের ব্যক্তিগত কলম ও ঘড়ি নিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর জুতা ও প্রসাধনসামগ্রীও লুট করেছে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, মানুষজন প্রাসাদে ঢুকে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং যার যা প্রয়োজন, তা সঙ্গে নিয়ে চলে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট আসাদের প্রাসাদকে উচ্চাভিলাষী ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো। দীর্ঘদিন ধরে দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। দামেস্কের পতনের পর সেই প্রাসাদেই ঘটে গেল মানুষের রাগ ও প্রতিশোধের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসাদের স্বৈরশাসনের অবসানের পরে এই লুটপাট ও ভাঙচুর সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ ও দমনপীড়নের প্রতিফলন। তবে এই তাণ্ডব সিরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে।