গুরুত্বপূর্ণ হোমস শহর দখলে নেওয়ার পরই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ঢুকতে শুরু করে বিদ্রোহী যোদ্ধারা। মাত্র এক দিনের লড়াইয়ের পরে রোববার ভোরে হোমসের মূল শহরটির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানায় বিদ্রোহীরা। এখন তারা রাজধানী দামেস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইতোমধ্যে দামেস্কের উপকণ্ঠে গোলাগুলির শব্দ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরই মধ্যে খবর এসেছে দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ার বিদ্রোহী কমান্ডার হাসান আব্দুল ঘানি রোববার (৮ ডিসেম্বর) ভোরে এক বিবৃতিতে বলেছেন, দামেস্কের আশেপাশের গ্রামাঞ্চলকে ‘সম্পূর্ণ মুক্ত’ করার জন্য অভিযান চলমান রয়েছে এবং বিদ্রোহী বাহিনী রাজধানীর দিকে তাকিয়ে আছে।
বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, তারা দামেস্কে ঢুকে পড়েছে। সেখানে কোনো সেনা মোতায়েন নেই। রাষ্ট্রীয় রেডিও, টেলিভিশন ও বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। কুখ্যাত একটি কারাগার ভেঙে সেখান থেকে হাজার হাজার বন্দিকে মুক্তিও দিয়েছে বিদ্রোহীরা।
বিদ্রোহের সূতিকাগার হোমস
২০১১ সালে হোমস শহর থেকেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদবিরোধী বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। হোমসের কেন্দ্রীয় শহর থেকে সরকারি সেনা প্রত্যাহারের পর সেখানকার হাজার হাজার বাসিন্দা রাস্তায় নেমে আসেন। তারা ‘আসাদ চলে গেছে, হোমস মুক্ত’ এবং ‘সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক, বাশার আল-আসাদের পতন হোক’ স্লোগানে নাচ-গানে মেতে ওঠেন।
বিদ্রোহীরা আকাশে ফাঁকা গুলি চালিয়ে হোমসের বিজয় উদযাপন করেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলতে দেখা যায় স্থানীয়দের।
হোমসের পতনকে বিদ্রোহীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিল। শহরটি সিরিয়ার কৌশলগত কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এটি দখলে নেওয়ার ফলে বিদ্রোহীরা গুরুত্বপূর্ণ হাইওয়ে ক্রসরোড এম-ফাইভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। উপকূলীয় অঞ্চল লাতাকিয়া থেকে দামেস্ককে যাওয়ার মূল সড়ক এটি। লাতাকিয়ায় রাশিয়ার নৌঘাঁটি রয়েছে।
সুন্নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের কমান্ডার আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি হোমস দখলকে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন। যেসব সরকারি সেনা অস্ত্র সমর্পণ করবেন তাদের ক্ষতি না করার আহ্বানও জানান তিনি।
বিদ্রোহীরা শহরের কারাগার থেকে হাজার হাজার বন্দিকে মুক্ত করেছে। সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাগজপত্র পুড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে পালিয়েছে। বিদ্রোহীরা বলেছেন, ‘আমাদের বিদ্রোহীদের মুক্তি দেওয়ার খবর আমরা উদ্যাপন করছি।’
বিদেশি কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকার হয়তো পতনের পথে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আগামী পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আসাদ সরকারের পতন হবে। অন্য একজন বলেছেন, আসাদ আগামী সপ্তাহের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হতে পারেন।
কাতার, সৌদি আরব, জর্ডান, মিশর, ইরাক, ইরান, তুরস্ক এবং রাশিয়া একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে বলেছে, সংকট একটি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তারা রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
বিদ্রোতীদের নেতা জোলানি সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন যে, তিনি তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করবেন না। এক সপ্তাহ আগে বিদ্রোহীরা যেই আলেপ্পো শহর দখল করেছিল, সেখানে কোনো ধরনের প্রতিশোধের খবর পাওয়া যায়নি। ফলে জোলানির ঘোষণা বাসিন্দাদের জন্য স্বস্তিকর হতে পারে।
হোমসের দখল কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল
*এটি সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর। দশ লাখের বেশি মানুষ শহরটিতে বসবাস করেন।
শহরটি এম-ফাইভ হাইওয়েতে অবস্থিত, যা রাজধানী দামেস্ককে লাতাকিয়া, আলেপ্পো এবং হামার সঙ্গে সংযুক্ত করে।
*এটি রাজধানী দামেস্ক থেকে মাত্র ১৮০ কিলোমিটার (১১২ মাইল) দূরে। এই পথে দামেস্কে যেতে কোনো বড় বাধা নেই।
*হোমস শহরে স্থল করিডরের মাধ্যমে লেবানের হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সরবরাহ করে ইরান। এখন এই সরবরাহ লাইন ব্যাহত হবে। অন্যদিকে শহরটির পতন রাশিয়াকেও চাপে রাখবে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সংঘাতে জড়িত হওয়া উচিত নয়। তিনি এক টুইটে বলেন, এটি যাদের খেলা তাদের খেলতে দেওয়া উচিত। সূত্র: রয়টার্স ও আল জাজিরা