৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা আন্তর্জাতিক সিনেমা বিভাগে লড়ছে মোহাম্মদ রাসুলফের নতুন সিনেমা ‘দ্য সিড অব দ্য স্যাক্রেড ফিগ’। তবে ইরান নয়, সিনেমাটিকে মনোনয়ন দিয়েছে জার্মানি। নিজ দেশ থেকে পালিয়ে আসার পর রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে আপাতত জার্মানিতেই আছেন রাসুলফ। অন্য দেশ থেকে অস্কার মনোনয়নে যাওয়াকে এই ইরানি পরিচালক বলছেন ‘অম্ল-মধুর’ অভিজ্ঞতা।
রাসুলফ ইরানের অন্যতম খ্যাতিমান পরিচালক। বলা যায়, ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ইরান সরকারের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হয় না। ২০১০ সালে ইরানের আরেক পরিচালক জাফর পানাহির সঙ্গে ছয় বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি। পাশাপাশি তাঁর সিনেমা নির্মাণের ওপর আরোপ করা হয় ২০ বছরের নিষেধাজ্ঞা। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী প্রচারণার অভিযোগ আনা হয়। পরে সাজা এক বছর কমিয়ে দেওয়া হয় এবং তিনি জামিনে মুক্তি পান।
এরপর গোপনে রাসুলফ নির্মাণ করেন ‘দেয়ার ইজ নো এভিল’। ২০২০ সালে সিনেমাটি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণ ভালুক জেতে। দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় রাসুলফ নিজে পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেননি।
২০২২ সালের মে মাসে ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আবাদানে নির্মাণাধীন একটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন ধসে পড়ে। এতে ৪১ জন নিহত হন। এ ঘটনার সমালোচনা করেন রাসুলফ। এ অপরাধে ওই বছরের জুলাই মাসে গ্রেপ্তার হন তিনি। গত বছর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে সাময়িকভাবে কারাগার থেকে মুক্তি পান। কিন্তু তাঁকে সরকারবিরোধী সব ধরনের প্রচারণা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় ইরানি কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যেই গোপনে ‘দ্য সিড অব দ্য স্যাক্রেড ফিগ’ নির্মাণ করেন রাসুলফ। ছবিটি চলতি বছর কান উৎসবে অফিশিয়াল মনোনয়ন পায়। সরকারের চাপের মুখেও কান থেকে ছবিটি প্রত্যাহার করে নেননি রাসুলফ। ফলে ইরান সরকার তাঁকে আট বছরের কারাদণ্ড দেয়। সেই সঙ্গে চাবুক মারা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেয়।
এর মধ্যেই গোপনে দেশ ছাড়েন নির্মাতা। কান উৎসবে যোগ দেন, পুরস্কারও জেতেন। সেই ছবিটিকেই অস্কারে মনোনীত করেছে জার্মানি।
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৫০ বছর বয়সী নির্মাতা জানিয়েছেন, ইরান কখনই এ ধরনের সিনেমা অস্কারে পাঠাত না। চলতি মাসেই সীমিত পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস ছবির প্রচারে হাজির হয়েছিলেন নির্মাতা।
কয়েক বছর আগে সংঘটিত ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘দ্য সিড অব দ্য স্যাক্রেড ফিগ’ সিনেমায় ইরানের বিচারব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরেছেন রাসুলফ। এই নির্মাতা জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, যত কঠিন সময়ই আসুক, তিনি সিনেমা নির্মাণ চালিয়ে যাবেন। তবে এ–ও জানান, ইরান তিনি খুব মিস করেন।