Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শোকগ্রস্ত বন্ধুকে কী বলে সান্ত্বনা দেব

 

chardike-ad

ডেভিড কেসলার একজন মার্কিন লেখক। আট বছর আগে তাঁর ছেলে মারা গিয়েছিল। এর পর থেকে মানুষের মুখে তিনি একটা কথা অনেকবার শুনেছেন, যার সারমর্ম হলো—‘যা হয়েছে, ভালোর জন্যই হয়েছে। হয়তো এটাই হওয়ার কথা ছিল।’ কথাটি শুনলেই রেগে যান কেসলার। তিনি বলেছেন, ‘যদি সত্যিই কারও কাছে ভালো হয়েছে এমন প্রমাণ থাকে, তবে আমাকে বলুক। এখন পর্যন্ত কেউ একটা ভালো কারণ বের করতে পারেনি।’ এই লেখকের মতে, ছেলের শোক সইতে খুব ভালো একটা কারণ দরকার। কিন্তু আসলে কোনো ভালো কারণের অস্তিত্ব নেই। শোক নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন কেসলার।

দুঃখের সময় মানুষের সান্ত্বনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আশপাশের মানুষ সান্ত্বনা দিতে গিয়ে অনেক সময় এমন কিছু বলে, যা সাহায্য করার চেয়ে আঘাতই করে বেশি। ধরো, এক বন্ধু সম্প্রতি খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এমন সময় আমাদের মধ্যেই কেউ বলল, ‘যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে।’ এই কথা বললে তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে আসলে আরও কষ্ট দেওয়া হয়।

মানুষ যখন শোকগ্রস্ত থাকে, তখন এমন কথা আমরা তাদের কেন বলি? এর উত্তর দিয়েছেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সামাজিক কাজের অধ্যাপক জোয়ান ক্যাসিয়াটোরি। তাঁর ‘বিয়ারিং দ্য আনবিয়ারেবল’ নামে একটি বই আছে। তাঁর মতে, এমন কথা বলার কারণ হলো, আমরা শোকগ্রস্ত মানুষকে দেখলে অস্বস্তি অনুভব করি। আমরা দেখতে চাই না একজন মানুষ শোকে ভেঙে পড়েছে।

বেশির ভাগ সময় আমরা অন্যের কষ্ট পাওয়ার সময়ে কীভাবে সাহায্য করত হবে বা কী বলতে হবে জানি না। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী আলেক্সান্দ্রা সলোমন বলেছেন, যে চলে গেছে, আমরা তাঁর অভাব পূরণ করার জন্য কিছু একটা সান্ত্বনার কথা বলি। অন্যদিকে শোকগ্রস্ত মানুষকে কী বলে সান্ত্বনা দেব, সে কথাটা বা বাক্যটা কী হবে আমরা জানি না।

অনেকে আবার কী বলবে ভেবে না পেয়ে শোকগ্রস্ত মানুষকে এড়িয়ে চলে। আসলে শোকগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। কেউ যদি সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলে,সবকিছুর পেছনে একটা কারণ আছে বা যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে, তাহলে শোকগ্রস্ত মানুষের ব্যথাকে শুধু অগ্রাহ্য করা হয় না, একই সঙ্গে তাঁকে কষ্ট দেওয়াও হয়। অনেক সময় সান্ত্বনাবাক্য খুঁজে পাওয়া যায় না ঠিকই, তবে এটি শিখে নেওয়ার সুযোগ আছে। বিশেষজ্ঞরাও এই বিষয়ে মতামত দিয়েছেন।

যদি তুমি শোকের মধ্যে থাকো

যখন কেউ তোমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু এতে যদি হিতে বিপরীত হয়, তোমার কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। তুমি হয়তো অনেক দিন মনে রাখবে, অমুক আমাকে আমার শোকের সময় এই কথাটা বলেছিল। এটা ভেবে তোমার অনেক পরেও রাগ হতে পারে।

কেউ নেতিবাচক কথা বললে তুমি কী করবে?

তোমার প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে ব্যক্তির সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন। যদি তোমার আত্মীয় হয় বা কাছের বন্ধু হয়, তাহলে কিছু একটা বলাও কঠিন। আবার তোমার শোকের অনুভূতি কত তীব্র, তার ওপরও বিষয়টি নির্ভর করে।

ড. ক্যাসিয়াটোরির মেয়ে মারা গেছেন ৩০ বছর আগে। তিনি শোক সহ্য করেছেন নিজের মতো করে। কেউ এ ধরনের কথা বললে তিনি বলেন, ‘আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ, কিন্তু এটি আমার জন্য সত্য নয়।’

যদি তুমি কাউকে সান্ত্বনা দিতে চাও

বন্ধুর শোকে যদি সান্ত্বনার কথা বলতে চাও, তবে বিশেষজ্ঞরা শুধু তাঁর পাশে থাকার পরামর্শ দেন। তুমি বলতে পারো, তোমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমি তোমার পাশে আছি। জানি না তোমার কত খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি যেকোনোভাবে সাহায্য করতে তোমার পাশে আছি। অথবা তুমি বলতে পারো, আমি সব সময় তোমার কাছেই আছি। খারাপ লাগলে আমাকে শুধু একটা কল করবে।

যিনি মারা গেছেন, তাঁর ভালো কোনো স্মৃতি তুমি বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করতে পারো। তোমার সঙ্গে ভালো সময়ে তাঁর সঙ্গে কী ঘটেছিল, বলতে পারো। শোক কখনো কখনো খুব সকালে বা গভীর রাতে আক্রান্ত করতে পারে। শোকগ্রস্ত মানুষকে তুমি জানাও যে যেকোনো সময়ই কথা বলার জন্য সে তোমাকে কল করতে পারে। হোক সেটা গভীর রাতে বা ভোরে।

যদি সঠিক শব্দ খুঁজে না পাও

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শোক সহ্য করার জন্য মানুষের পাশাপাশি প্রাণীদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শোকাহত কিছু ব্যক্তি থেরাপিস্ট, পরিবার, কিংবা বন্ধুর চেয়েও পোষা প্রাণীর কাছে বেশি সান্ত্বনা পায়। ‘কোনো শব্দ করা ছাড়া প্রাণীরা সম্পূর্ণ মন নিয়ে পাশে থাকে। শোকাহতদের প্রতি মনোযোগ দেয়।’

তাই গবেষকদের মতামত, সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়ার চেয়ে পাশে থাকা এবং কাছাকাছি থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আসলে শব্দ নিয়ে এত বেশি চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।