ঘোষণাটা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন, সে অনুযায়ী লাল বলের ক্রিকেটে আজ থেকে সাবেক হয়ে গেলেন ইমরুল কায়েস। টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির ম্যাচ থেকে অবসর নিয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। বিদায়ী ম্যাচে সতীর্থদের কাছ থেকে কয়েক দফায় ‘গার্ড অব অনার’ পাওয়া ইমরুল ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে পেয়েছেন সংবর্ধনা।
বাংলাদেশের হয়ে ৩৯টি টেস্ট, ৭৮টি ওয়ানডে ও ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটসম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হয় বিসিবির পক্ষ থেকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক। ছিলেন তুষার ইমরান, সৈয়দ রাসেল, শুভাগত হোম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতরাও।
বিসিবির সংবর্ধনা পাওয়ার আগে এনামুল হক বিজয়, শেখ পারভেজ জীবনদের কাঁধে চড়ে মাঠ ছাড়েন ইমরুল। বিদায় বেলায় বিসিবির আয়োজন, সতীর্থদের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসা, শুভ কামনা পেয়ে উচ্ছ্বসিত ইমরুল শেষের পর্বটা অবশ্য রাঙাতে পারেননি। জাতীয় লিগে খুলনা বিভাগের হয়ে ঢাকার বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৭ (১৬ ও ১) রান করেন ইমরুল।
এ নিয়ে অবশ্য আক্ষেপ নেই তার। টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যানের আক্ষেপ টেস্ট ক্যারিয়ার নিয়ে। ৭৬ ইনিংসে ৩টি সেঞ্চুরি ও ৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৪.২৮ গড়ে ১ হাজার ৭৯৭ রান করা ইমরুলের উপলব্ধি, টেস্ট ক্যারিয়ারটা আরও ভালো হতে পারতো তার। যদিও এসব নিয়ে আফসোস করার পক্ষে নন তিনি।
শেষ ম্যাচের পর মিরপুর স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনে কথা বলা ইমরুল লাল বলের ক্যারিয়ারের সারাংশ টানেন এভাবে, ‘২০০৬ সালে যখন আমার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়, আমি চিন্তা করিনি যে বাংলাদেশ দলের হয়ে এতোগুলো টেস্ট খেলতে পারব। আর সব শেষে এখন যেভাবে বিদায় নিলাম, আমি খুব খুশি যে বাংলাদেশের হয়ে ৩৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পেরেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।’
‘কারণ এক টেস্ট হোক, পঞ্চাশ টেস্ট বা একশ টেস্ট খেলেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করাই বড়। প্রায় ১০-১২ বছর দলের সঙ্গে থেকেছি, খেলেছি বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন দেশে। এটা আমার জন্য অনেক গর্বের ছিল। আমি চেষ্টা করেছি ব্যাটিং করে হোক বা কিপিং করে হোক, দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে। আমার হয়তো আরও ভালো টেস্ট ক্যারিয়ার হতে পারতো। তবে যেটা হয়নি, সেটা নিয়ে এখন আর আফসোস মনে করি না। যা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্।’
লাল বলের বিদায় বেলায় সুখস্মৃতি খুঁজতে ইমরুল মনে করলেন ওয়ানডের কথা। ভাগ্যবান মনে হয়, এমন মুহূর্তের কথা জানাতে গিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের এক অভিজ্ঞতা বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘২০১১ বিশ্বকাপে আমার মনে আছে, আমরা যখন ইংল্যান্ডকে হারালাম, ম্যাচ শেষে আমরা হোটেলে ফিরছিলাম। ওই রাতটার কথা আমার এখনও মনে পড়ে। আমাদের খেলা শেষ হয়েছিল রাত ১০টায়, হোটেলে ফিরতে আমাদের বেজে যায় রাত একটা।’
‘মানুষজন যেভাবে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল, আমাদের তারা যেতে দেবে না, আমাদের সঙ্গে তারা আনন্দ করবে। আর্মি এসে মানুষগুলোকে সরিয়ে আমাদের যেতে দিয়েছিল। হোটেলের সামনেও অনেক মানুষ ছিল। ওই রাতটা মাঝেমাঝে আমাকে নাড়া দেয়। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটকে ও আমাদেরকে কতোটা ভালোবাসে।’ যোগ করেন তিনি।
টেস্ট ক্যারিয়ারের মতো জাতীয় দলের হয়ে কোনো শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপও পোড়ায় ইমরুলকে, ‘আক্ষেপ একটা আছে… বাংলাদেশের হয়ে আমি, সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, তামিম, রিয়াদ ভাই অনেক দিন একসঙ্গে খেলেছি। যদি বড় আসর থেকে একটা ট্রফি নিয়ে আসতে পারতাম, তাহলে ভলো লাগতো। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিপাক্ষিক ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ট্রফি আনতে পারিনি। আয়ারল্যান্ডে একটা পেয়েছি। তবে এশিয়া কাপ বা নিদাহাস ট্রফির মতো বড় কিছু যদি আনতে পারতাম, তাহলে ক্যারিয়ার শেষে ভালো লাগতো।’