Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইসলামি বক্তা মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ

 

chardike-ad

বৈশ্বিক গাড়ি শিল্প সংস্কারের যুগে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি বা নবীন শক্তি যান (এনইভি) বিক্রির ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করেছে। চীনের অটোমোবাইল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) জানিয়েছে, প্রথম দেশ হিসেবে চীন এক বছরে ১০ মিলিয়ন ইউনিট এনইভি উৎপাদনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।

চীনের এনইভি শিল্পের দ্রুত অগ্রগতি কেবল দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে না, বরং এটি বিশ্বব্যাপী সবুজ রূপান্তর ও জলবায়ু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

নবীন শক্তি যান (এনইভি) হলো এমন যানবাহন, যেগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন- পেট্রোল বা ডিজেল ব্যবহার না করে বিকল্প শক্তির উৎস দ্বারা চলতে সক্ষম। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:

প্রথমত, বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি), যা ব্যাটারিতে সংরক্ষিত বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা চলে। দ্বিতীয়ত, প্লাগ-ইন হাইব্রিড যানবাহন (পিএইচইভি), যা একটি অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন এবং বৈদ্যুতিক মোটরের সংমিশ্রণ ব্যবহার করে, ফলে এটি গ্যাসোলিন বা বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে চলতে পারে। তৃতীয়ত, ফুয়েল সেল বৈদ্যুতিক যানবাহন (এফসিইভি), যা হাইড্রোজেন ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন করে।

এনইভি পরিবেশবান্ধব হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমায় এবং গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সাহায্য করে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত বছরের বিশ্ব টেকসই পরিবহণ দিবসে উল্লেখ করেছিলেন যে, পরিবহন খাত বিশ্বব্যাপী সমস্ত গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় এক চতুর্থাংশের জন্য দায়ী। স্থল, সমুদ্র ও আকাশে মোটরচালিত পরিবহনে ব্যবহৃত ৯১ শতাংশ শক্তি জ্বালানি তেল থেকে আসে। এর মানে হলো, পরিবহন সরঞ্জামের নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন বৈশ্বিক নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্য অর্জনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের উচ্চ কার্যকারিতা এবং সাশ্রয়ী দামে তৈরি এনইভি বৈশ্বিক নির্গমন হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

অনেক বিদেশি ব্লগার যারা চীনে ভ্রমণ করেছেন, তারা চীনের রাস্তায় এনইভির ব্যাপক ব্যবহার দেখে অবাক হয়েছেন।

চীন শুধু নিজ দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে এবং বায়ু দূষণ হ্রাস করছে না, বরং বিশ্বব্যাপী এই প্রক্রিয়াটি প্রচার করছে, যা আরও অনেক দেশকে ‘সবুজ পরিবহণ’ বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত করছে।

যদি চীনা কোম্পানির বিদেশি কারখানাগুলোও ধরা হয়, তবে চীনের এনইভি শুধু ১০ মিলিয়ন ইউনিট তৈরি করেই থেমে নেই, বরং আরও বড় ভূমিকা রাখছে। ২০২৩ সালে, এই যানবাহন প্রায় ৫০ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করেছে। এ বছর তা আরও বাড়বে।

১৯৯৫ সালে চীন প্রথম বৈদ্যুতিক বাস ‘ইউয়ানওয়াং’ চালু করেছিল। এরপর থেকে চীনের এনইভি শিল্প দ্রুত এগিয়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে উৎপাদন ছিল মাত্র ১৮ হাজার ইউনিট, ২০১৮ সালে এটি ১০ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছিল এবং এখন এটি ১০ মিলিয়ন ইউনিটে পৌঁছেছে। এনইভি-র দ্রুত বৃদ্ধি চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, উৎপাদন ক্ষমতা এবং বাজারের শক্তিশালী চাহিদার প্রতিফলন।

চলতি বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর পর্যন্ত চীনের এনইভি উৎপাদন ও বিক্রয় ৩৩ শতাংশ এবং ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত বছর, বৈশ্বিক এনইভি বিক্রয় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সির অনুমান অনুযায়ী, ২০৩০ সালে বৈশ্বিক এনইভি চাহিদা ৪৫ মিলিয়ন ইউনিটে পৌঁছাবে, যা ২০২৩ সালের চাহিদার তিন গুণেরও বেশি।

চীনের এনইভি শিল্পের এই উন্নতি সবুজ শক্তি বাস্তবায়নের একটি বড় সাফল্য। চীন শুধু সবুজ শক্তিকে উচ্চমানের পণ্য ও শিল্পে পরিণত করেনি, বরং এটিকে জীবনযাত্রার একটি উন্নত ধারা হিসেবে সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করেছে।

বর্তমানে চীনের প্রতি ৩ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের মধ্যে ১ কিলোওয়াট ঘণ্টা আসে সবুজ শক্তি থেকে। বিশ্বজুড়ে বাতাস ও সৌর শক্তির খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। চীন বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশে সবুজ শক্তি ও এনইভি পণ্য সরবরাহ করছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাশ্রয়ী ও ক্লিন এনার্জি পেতে সাহায্য করছে।