Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ

 

chardike-ad

তিনি ছিলেন একজন ম্যাজিশিয়ান। সব বয়সীদের মনের খোরাক লিপীবদ্ধ করেছেন সাদা কাগজে। মানুষের মনের অলিন্দে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে গেছেন। তাই তো, তার ৭৬ তম জন্মদিনে একজন হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে  আছেন বৃষ্টিস্নাত ভোরে, জোছনা রাতের চাঁদের আলোয়, আর লাখো পাঠকের মনের মণিকোঠায়।

১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে উপহার দিয়েছেন সাড়া জাগানো সব উপন্যাস।

 তৈরি করেছেন হিমু, মিসির আলী, শুভ্রের মতো জনপ্রিয় চরিত্র। নির্মাতা হিসেবেও উপহার দিয়েছেন জনপ্রিয় নাটক এবং চলচ্চিত্র। তার উল্লেখযোগ্য নাটক এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, নক্ষত্রের রাত ও আজ রবিবার। উল্লেখযোগ্য সিনেমা দুই দুয়ারি, দারুচিনি দ্বীপ, আমার আছে জল ও ঘেটু পুত্র কমলা। 

বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। তার মধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।

হুমায়ূন আহমেদের ডাকনাম ছিল কাজল। তবে তার হুমায়ুন নাম নিয়ে তিনি লেখেন, “আমার নিজের নাম হুমায়ূন হওয়ায় ক্লাস সিক্স-সেভেনে আমার মধ্যে শুধুমাত্র নামের কারণে এক ধরনের হীনমন্যতা তৈরি হয়। সেই সময়ের পাঠ্যতালিকায় মোঘল ইতিহাস খানিকটা ছিল, তাতে শের শাহ্’র হাতে হুমায়ূনের একের পর এক পরাজয়ের কাহিনী। হুমায়ূনের পরাজয়ের দায়ভার খানিকটা আমাকে নিতে হয়েছিল। ক্লাসে আমাকে ডাকা হতো ‘হারু হুমায়ূন’। কারণ আমি শুধু হারি। আমি কার কাছে হারি ? মহান সম্রাট শের শাহ্’র হাতে—যিনি ঘোড়ার ডাকের প্রচলন করেন, গ্রান্ডট্রাংক রোড বানান । আমি শুধু পালিয়ে বেড়াই। হায়রে শৈশব!”

১৯৭২ সালে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস আহমেদ ছফার অনুপ্রেরণায় ‘নন্দিত নরকে’ পাঠকমহলে এতটাই নন্দিত হয়েছিল যে এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। 

১৯৮০-১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য ধারাবাহিক এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রচনা শুরু করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে তার প্রথম টিভি কাহিনীচিত্র ‘প্রথম প্রহর’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার শুরু হলে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

নব্বই দশকের মাঝামাঝি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরো মনোযোগ দেন হুমায়ূন আহমেদ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ক্যান্সারের কাছে হার মানার আগে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, গীতিকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক- প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন।

হুমায়ূন আহমেদ ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশা নামদার’ ‘দেয়াল’সহ দুই শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন। 

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তার শরীরে মারণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর উন্নত চিকিৎসা নিতে তিনি চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে।

সেখানে প্রথমে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেও পরে আবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শেষে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তাকে নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। সে অবস্থায়ই ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে হুমায়ূন আহমেদ শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। স্বাগত বক্তৃতা করবেন সংস্কৃতি, পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক ড. সরকার আমিন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র।।