প্রতিবেশী শামীমা বেগমকে (মার্জিয়া) চুরির অপবাদ দেওয়ার ক্ষোভ থেকে সিলেটের কানাইঘাটের শিশু মুনতাহা আক্তারকে (৫) হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের ধারণা। মুনতাহা কানাইঘাটের বীরদল ভারারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। ৩ নভেম্বর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। গতকাল রোববার ভোররাতে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে শামীমা বেগমকে আটক করা হয়। পরে গতকাল শামীমার মা আলিফজান বেগম (৫৫), তাঁদের প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও নাজমা বেগমকে (৩৫) আটক করা হয়। মুনতাহা হত্যার ঘটনায় কোনো মামলা না হলেও নিখোঁজের ঘটনায় তার বাবা শামীম আহমদের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় এই চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্র বলছে, প্রায় চার মাস আগে মুনতাহার গৃহশিক্ষক হিসেবে শামীমা পড়ানো শুরু করেন। তবে মুনতাহার পরিবারের সদস্যদের না জানিয়েই তিনি পড়াতে আসতেন না। পরে মুনতাহার পরিবার তাঁকে পড়াতে মানা করে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হন শামীমা। এর মধ্যে মুনতাহাদের পরিবারে কিছু কাপড় হারানোর ঘটনা ঘটে। সেসব কাপড় শামীমাদের বাড়িতে পাওয়া যায়। চুরির অপবাদ দেওয়া হয় তাঁকে। এসব থেকে শিশু মুনতাহাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।
আজ সোমবার সকালে সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (কানাইঘাট সার্কেল) অলক কান্তি শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার চারজন থানায় আছেন। তাঁদের সিলেটের আদালতে পাঠানো হবে। শামীমা হত্যার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে বিস্তারিত জানা যাবে।
গতকাল ভোররাতে শামীমার মা আলিফজান বেগম ডোবা থেকে লাশ উঠিয়ে পুকুরে ফেলতে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন তাঁকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়।
নিহত মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ বলেন, মুনতাহা নিখোঁজের পরও শামীমা একাধিকবার তাঁদের বাড়িতে এসেছেন। সে সময় তাঁর আচরণে মনে হয়নি তিনি তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘একসময় চাঁদা তুলে ঘর বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেই উপকারের প্রতিদান হিসেবে আমার মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আমি চাই, আমার মেয়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।’
শামীম আহমদ বলেন, মুনতাহার কাপড় কাউকে না বলে শামীমা নিয়ে ফেলে দিতেন। কেউ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলতেন, এত দামি কাপড় বাচ্চাদের পরানো ঠিক নয়। আবার হারিয়ে যাওয়া কাপড়ও শামীমার ঘর থেকে পাওয়া যেত। এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে শামীমা বলতেন, এসব কাপড় কে নিয়েছেন, তিনি জানেন না।