গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় দুজন সিপাহসালার হারিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস। এরপর এবার নতুন বিপাকে পড়তে যাচ্ছে গোষ্ঠীটি। হামাসের নেতাদের কাতার থেকে বের করে দিতে অনুরোধ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (০৯ নভেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শুক্রবার মার্কিন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের বিনিময়ের সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র কাতারকে রাজধানী থেকে তাদের নেতাদের বের করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। দেশটি বলছে, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দোহায় আর হামাস নেতাদের হামাসের উপস্থিতি আর গ্রহণযোগ্য নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করার পরে গোষ্ঠীটির নেতাদের আর কোনও আমেরিকান অংশীদারের রাজধানীতে স্বাগত জানানো উচিত নয়। কয়েক সপ্তাহ আগে হামাস জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আরেকটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর আমরা কাতারকে তা পরিষ্কার করে দিয়েছি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, কাতার প্রায় ১০ দিন আগে হামাস নেতাদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছে। এ ছাড়া হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করার বিষয়ে ওয়াশিংটন কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং এটি দোহাকে বলেছে, যে সাম্প্রতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরে এখন বিষয়টি বিবেচনার সময় এসেছে বলে জানিয়েছে দোহা।
হামাসের তিনজন নেতা জানিয়েছেন, তাদের বের করে দেওয়ার বিষয়ে কোনোকিছু কাতারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। এ ছাড়া এ বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিতকরণ বা মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধের জবাব দেননি।
উল্লেখ্য, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিসর গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এতে কোনো ফলাফল মেলেনি। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে দোহা আলোচনার সর্বশেষ রাউন্ড একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। এ সময় হামাস স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছর ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এ জন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিসরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে… দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই এ অঞ্চলের ভৌগোলিক চিত্র পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেখানে আগে পাহাড় ছিল না, এখন সেখানে পাহাড় হয়ে গেছে। দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো আক্ষরিক অর্থেই এ অঞ্চলের মানচিত্র বদলে দিয়েছে।’