গতবারের চেয়ে কেজিতে তিন টাকা দর বাড়িয়ে কৃষকের কাছ থেকে এবার আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার প্রতি কেজি সেদ্ধ চাল ৪৭ টাকা, আতপ চাল ৪৬ টাকা এবং ধান ৩৩ টাকায় কেনা হবে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, উৎপাদন খরচ এবং অন্যান্য খরচ হিসাব করে সরকারের ধান ও চাল কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এবার প্রয়োজনের চেয়ে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা একটু বাড়িয়ে ধরা হয়েছে, যাতে কোনো ঘাটতি সৃষ্টি না হয়। বৈঠকে সরকারের মজুত ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারিভাবেও চাল আমদানির প্রয়োজনের পরামর্শ এসেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার এমনভাবে ধান ও চাল কেনার দাম নির্ধারণ করেছে, যার সঙ্গে ভোক্তা পর্যায়ে যাতে খুব বেশি পার্থক্য না থাকে। সে জন্য বাজার মনিটর কার্যক্রম জোরদার করতে বলা হয়েছে। দামের পার্থক্য অনেক বেশি হলে ভোক্তা কষ্ট পাবে। আবার কৃষকও প্রকৃত দাম পাবেন না।
খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান জানান, আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ চলবে। আর আতপ চাল সংগ্রহের সময় ১৭ নভেম্বর থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত। এ বছর সাড়ে ৩ লাখ টন ধান ও সাড়ে ৫ লাখ টন চাল এবং ১ লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। উৎপাদন খরচ গত বছরের চেয়ে দুই থেকে আড়াই টাকা বেড়েছে বিবেচনায় ফসলের দাম কেজিতে তিন টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। শুল্ক কমিয়েও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি এনবিআর সম্পর্কিত।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর আমন মৌসুমে ৭ লাখ টন চাল ও ধান কেনার পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে ছিল ২ লাখ টন ধান ও ৫ লাখ টন চাল। ৪ লাখ টন সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা ও ১ লাখ টন আতপ চাল ৪৩ টাকা এবং ২ লাখ টন ধান ৩০ টাকা কেজি দরে কেনার সিদ্ধান্ত ছিল।
চলতি অর্থবছরে চাল আমদানি প্রসঙ্গে খাদ্য সচিব বলেন, সরকারি পর্যায়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমদানির প্রক্রিয়া চলমান। এর মধ্যে ৩ লাখ টন সরকার থেকে সরকার বা জিটুজি পদ্ধতিতে এবং ২ লাখ টন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ওএমএসসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাড়ানো হবে।
মতামত জানতে চাইলে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক সমকালকে বলেন, বর্তমানে বাজারে ধান-চালের দামের সঙ্গে সংগতি রেখে সরকার নির্ধারিত দাম আরও বেশি হওয়া উচিত। এ দামে চাল সংগ্রহ করা খুবই কঠিন হবে। প্রতিবারই সংগ্রহের একটি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও পূরণ হয় না। গতানুগতিক পদ্ধতি পরিবর্তন করে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না, কৃষকও লাভবান হবেন না।
তিনি আরও বলেন, সরকার বাড়ালে খোলা বাজারে আরও বাড়বে– এ যুক্তিতে দাম বাড়ানো হয় না। কিন্তু এটি সঠিক নয়। কারণ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষককে যৌক্তিক দাম দেওয়া উচিত। খোলা বাজারে দাম বেড়ে গেলে ওএমএস কার্যক্রম বাড়াতে হবে। কারণ দেশের কৃষকদের কাছ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে চাল কেনা হলেও আমদানির ক্ষেত্রে অনেক সময় ৭০ টাকা কেজি পড়ে। এক্ষেত্রে কৃষকদের অনেক ঠকানো হয়।
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। এ ছাড়া মাঝারি চালের (বিআর-২৮ ও পাইজাম) কেজি ৫৮ থেকে ৬৫ এবং চিকন চালের (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) কেজি ৬৮ থেকে ৮০ টাকা। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য মতে, গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে গড়ে ৪ শতাংশ। তবে এক বছরের ব্যবধানে এ হার আরও বেশি। এ সময় সব ধরনের চালের দর বেড়েছে, গড়ে ৯ শতাংশ।