‘দাওয়াত ও তাবলিগ, মাদারেসে কওমিয়া এবং দ্বীনের হেফাজতের লক্ষ্যে’ ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের উদ্যোগে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) আয়োজিত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইসলামি মহাসম্মেলন থেকে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণা পাঠ করেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।
তিনি জানান, বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি এবং ১, ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মহাসম্মেলন থেকে।
এ সময় মাহফুজুল হক ২০১৮ সালে ইজতেমার ময়দানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার ও কাকরাইল মসজিদ আলেমদের নিয়ন্ত্রিত রাখাসহ ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে সম্মেলনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি দাবিগুলো মানতে একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সোমবার (৪ নভেম্বর) ‘তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপকে (জোবায়ের ও সাদ) নিয়ে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে তাবলীগের জুবায়েরপন্থি (হেফাজত, কওমি আলেমদের অনুসারী) আলেমরা উপস্থিত হননি। বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারের পক্ষে আলোচনা সাপেক্ষে ইজতেমার দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও এবার জুবায়েরপন্থিরা নিজেরাই দিনক্ষণ জানালো।
প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অংশদারত্বের বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বিরা। ২০১৫ সালে তাবলিগের দিল্লির নিজামুদ্দিন বিশ্ব মারকাজের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির বিরোধিতা করেন পাকিস্তান ও ভারতের কয়েকজন মুরব্বি।
২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়। সংঘর্ষে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এরপর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই ভাগ হয়ে পড়ে তাবলিগ জামাত। ২০১৯ সাল থেকে আলাদাভাবে বিশ্ব ইজতেমা ও তাবলিগের কার্যকম পরিচালনা করেন তারা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি কাকরাইল মসজিদে আসেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভি।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ফজরের নামাজের পর থেকেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উদ্দেশে জড়ো হন আলেমরা। এই আলেমরা হেফাজতের অনুসারী। মহাসমাবেশের পেছনে খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের অবদান রয়েছে।
সমাবেশ রাজধানীর ঢালকানগর মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি জাফর আহমাদ বলেছেন, ‘শরয়ী তওবা না করা পর্যন্ত ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে, দাওয়াত ও তাবলিগের সঙ্গে মাওলানা সাদের কোনও ধরণের সম্পর্ক নাই। আমাদেরও তার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নাই।’
মহাসম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারীর সঞ্চালনায় মহাসম্মেলনে বক্তব্য রাখেন– মাওলানা খলিল আহমাদ কাসেমী, মাওলানা রশিদুর রহমান, জিয়াউদ্দিন, সাজিদুর রহমান, আব্দুল কুদ্দুস, নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুস্তাক আহমদ, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মুফতি মনসুরুল হক, মাওলানা মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মুফতি মহাম্মদ ফয়জুল্লাহ (মুহতামিম, মাদানীনগর মাদ্রাসা), মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতি নুরুল আমীন (পীর সাহেব খুলনা), জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা ইমদাদুল্লাহ।