১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সংঘটিত সৈনিক ও জনতার এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার দৃশ্যপটে আসেন জিয়াউর রহমান। দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে বিএনপি। সরকার-পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন পরিস্থিতিতে এ বছর আড়ম্বরে দিবসটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে ১০ দিনের কর্মসূচিও।
বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা এরইমধ্যে ৭ নভেম্বরকে উদযাপন করতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সারা দেশে জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ডের পরিচিতিমূলক প্রচারণাকে প্রাধান্য দিয়ে এই উদযাপন করছে বিএনপি।
দিবসটিকে কেন্দ্র করে সোমবার (৪ নভেম্বর) ঢাকার সব নেতাদের নিয়ে যৌথ সভা করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সকালে নয়া পল্টনে মহানগর কার্যালয়ে সভাটি হবে।
এর আগে রবিবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে পোস্টার বিতরণ ও প্রস্তুতি সভা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এম রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন, সহ-সভাপতি ফেরদৌস মাহমুদ রুবেল, যুগ্ম সম্পাদক আল আমিন বাবলুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃবৃন্দ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল শাখা সভাপতি মো. আবু হোরায়রা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিএনপির দলীয় পোস্টার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাঁটানোর উদ্দেশ্যে রবিবার সভা করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল জাতীয় এ দিবসটির মাহাত্ম্যকে সামনে রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে জেনারেল খালেদ মোশাররফের ৩ দিনের সামরিক অভ্যুত্থানের পতন ঘটায়। দলীয় সূত্র বলছে, ১৯৭২ সালের জুন মাসে জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ করা হয়। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি একজন ব্রিগেডিয়ার এবং বছরের শেষের দিকে একজন মেজর জেনারেল হন। জিয়াউর রহমান ২৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে সেনাপ্রধান হন।
খালেদ মোশাররফ যখন শাফাত জামিলের নেতৃত্বে ঢাকা ব্রিগেডের সমর্থনে ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে একটি অভ্যুত্থান ঘটান, তখন জিয়াউর রহমান তার কমান্ড পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং তাকে গৃহবন্তি করা হয়। ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা বিপ্লব তাকে রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে যায়।
দলের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানকে পুনরায় সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে একই দিনে সেনা সদর দফতরে এক বৈঠকে বিচারপতি এএসএম সায়েমকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং তিন বাহিনীর প্রধান, মেজর জেনারেল জিয়া, বিমানবাহিনী প্রধান হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনার জন্য একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো সাজানো হয়। উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ভাইস মার্শাল এমজি তোয়াব এবং রিয়ার অ্যাডমিরাল এমএইচ খান। জিয়াউর রহমান ১৯ নভেম্বর ১৯৭৬-এ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন যখন বিচারপতি সায়েম তার পদত্যাগ করেন। শেষ পর্যন্ত ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি সায়েম পদত্যাগ করলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন জিয়াউর রহমান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান উল্লেখ করেন, ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় অফিস সামনে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন। পরে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আর ৭ নভেম্বর তারিখে কোনও কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। ৭ নভেম্বর উপলক্ষে ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে বিএনপি। সেই সমাবেশেই সর্বশেষ খালেদা জিয়া বক্তব্য দিয়েছিলেন।
শায়রুল কবির খান বলেন, এবার বিএনপি ৭ নভেম্বরসহ আরও কয়েকদিন যথাযথ মর্যাদায় ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করবে নানান কর্মসূচি ও প্রকাশনার মাধ্যমে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে দিবসটিকে কেন্দ্র করে ১০ দিনের কর্মসূচি জানিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে— ৬ নভেম্বর বুধবার বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে আলোচনা সভা, ৭ নভেম্বর সকাল ৬ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোয় দলীয় প্রতাকা উত্তোলন, ৭ নভেম্বর সকাল ১০টায় দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ, ৮ নভেম্বর শুক্রবার রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র্যালি, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের উদ্যোগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাতীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য, ৭ নভেম্বর সাপ্তাহিক কর্মদিবস থাকায় পরদিন (৮ নভেম্বর) শুক্রবার র্যালি করবে বিএনপি। রাজধানীর নয়া পল্টন থেকে বর্ণাঢ্য এই র্যালি এক ঘণ্টার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
এ উপলক্ষে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনকে আহ্বায়ক, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকুকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি র্যালি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দলের পক্ষ থেকে সাত নভেম্বর উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এছাড়া দলের বুদ্ধিজীবীরা লিখবেন বিশেষ রচনা।