বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষা ব্যবস্থা অনুযায়ী মানুষের জ্ঞান আছে কিন্তু বিবেক নাই। বর্তমানে যে শিক্ষাব্যবস্থা সেই শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষ নয় রোবট তৈরি করছেন। যার উৎকৃষ্ট উদাহারণ হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো। কীভাবে সম্ভব, এভাবে নিরস্ত্র মানুষের বুকে পুলিশের গুলি চালানো। রোবট বিধায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক, শিক্ষক ও গণবুদ্ধিজীবী ড. সলিমুল্লাহ খান।
শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শিক্ষা সংস্কার সংলাপে মুখ্য আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান সমস্যা হচ্ছে শিক্ষা সংকোচন। অর্থাৎ শিক্ষানীতির গোড়ায় হচ্ছে যতটা রাষ্ট্রের প্রয়োজন, যতটা বাজারের প্রয়োজন, সেই পর্যন্ত সীমিত রাখা। শিক্ষা হলো সার্বজনীন অধিকার। যেটা বাজারের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। নাগরিক হিসেবে জন্মেছি, তাই রাষ্ট্রকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। এটা আন্তর্জাতিক মান, এবং দেশের আইন। এটা বাস্তবায়ন রাষ্ট্র করতে না পারলে, রাষ্ট্রকে পদত্যাগ করতে হবে। শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলছি তা নয়, আপনি যদি এটা সংস্কার করতে না পারেন, তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। যে রাজনৈতিক দল এটা করতে পারবে তাদেরকে দায়িত্ব দিন।
তিনি আরও বলেন, এখন সবাই বলছে কর্মমুখী শিক্ষা চাই। আমি বলি কর্মমুখী শিক্ষা নয়, মানবমুখী শিক্ষা চাই। আপনি যখন শিক্ষিত হবেন, আপনি কোনো কর্মে প্রবেশ করবেন, সেটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আপনি তখন মানবিক শিক্ষার মাধ্যমে কর্মের মধ্যে প্রবেশ করবেন। কিন্তু লেখাপড়ার সঙ্গে কর্মের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষিত করা মানবিকতাকে অমর্যাদা করা। শিক্ষা হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার। আমাদের এই শিক্ষার ভিত্তিতে সচেতন নাগরিক হতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সংস্কার সংলাপে লেখক ও গণবুদ্ধিজীবী নাহিদ হাসান নলেজের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ইএসডিওর চেয়ারম্যান ড. শহীদুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক ড. মুহাম্মদ ইফতেখারুল আলম মাসুদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জেলা সমন্বয়ক চিনু কবির, প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ, কবি ও লেখক আহমেদ মওদুদ।
রাষ্ট্রালাপ পাঠচক্র, বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, রংপুর জেলার আয়োজনে শিক্ষা সংস্কার সংলাপে ধারণাপত্র পাঠ করেন লিপি দেবগুপ্ত। সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ন্যায়পাল অ্যাডভোকেট রায়হান কবীর। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।