ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ইউনিট বাঁধনের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দেওয়া খাবার খেয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে সাতজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার থেকেও অনেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের সন্দেহ, রাজধানীর চানখারপুলের নাজিমুদ্দিন রোডে ‘বনফুল সুইটস এন্ড কোং’ থেকে আনা পাটিসাপটা পিঠা খেয়েই তাদের এই সমস্যা হয়েছে।
তবে এই অভিযোগ নাকচ করে বনফুল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের খাবারে কোনো ধরনের ঝামেলা নেই।
জানা যায়, গত শুক্রবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শহীদুল্লাহ হল মিলনায়তনে এই নবীনবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মিলিয়ে শতাধিক লোকের অংশগ্রহণ ছিল। এই অনুষ্ঠানের জন্য চার আইটেমের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সেগুলো হলো, লাড্ডু, কাপ কেক, সিংগারা ও পাটিসাপটা পিঠা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা লাড্ডু ও কেক সরাসরি ফ্যাক্টরি থেকে মেয়াদ ও গুনগত মান দেখেশুনেই এনেছেন। এই দুই আইটেমে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া সিঙাড়া হল ক্যানটিনে নিজেদের তত্ত্বাবধানেই তৈরি করা হয়েছে। এটাতেও সমস্যা নেই বলে দাবি তাদের। তবে তাদের সন্দেহের তীর বনফুলের পাটিসাপটা পিঠার দিকে। তাদের ধারণা, এই পিঠা খেয়েই তাদের পেটে সমস্যা, জ্বর, বমি ইত্যাদি অসুখ হয়েছে।
এ বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী ও হল ইউনিট বাঁধনের সভাপতি আলিম মাহমুদ বলেন, আমাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে চারটি খাবারের আইটেম ছিল। এর মধ্যে লাড্ডু ও কাপ কেক অন্যতম। এগুলো ফ্যাক্টরি থেকে প্যাকেজ করে আনা হয়। আর আমরা এটা আনার আগে বারবার ডেট ও মেয়াদ চেক করেছি, এই দুটিতে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। আমাদের অনুষ্ঠানে আরও দুইটা আইটেম ছিল, যার মধ্যে রয়েছে হচ্ছে সিঙারা ও পাটিসাপটা পিঠা। সিঙাড়া আমাদের হলের ক্যানটিন থেকে তৈরি করা।
তিনি আরও বলেন, হলের ক্যানটিনে তারা সিঙাড়া রেগুলার তৈরি করে বিষয়টা এমন নয়, এ জন্য আগের খাবার দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা সিঙাড়া তৈরি করেছে আমাদের জন্য এবং আমাদের তত্ত্বাবধানে এটা হয়েছে। পাটিসাপটা পিঠা আমরা চানখারপুলের নাজিমুদ্দিন রোডের বনফুল থেকে নিয়ে এসেছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, যারা এই পাটিসাপটা পিঠা বাদে বাকি তিন আইটেমের খাবার খেয়েছে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়েছে যারা পাটিসাপটা পিঠা খেয়েছে তাদেরই। যারা অসুস্থ হয়েছেন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের কাউকে কাউকে হাসপাতালে পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। অতএব আমরা সন্দেহ করছি, বনফুলের পাটিসাপটা পিঠা থেকেই এই সমস্যাটা সৃষ্টি হতে পারে।
মাজহারুল ইসলাম সৌরভ নামে হলটির আরেক শিক্ষার্থী বলেন, শনিবার সকাল থেকে অনেকেরই পেটে সমস্যা শুরু হয়। বিষয়টি রাতে জানাজানি হয়, পরে আমরা হল অফিসে জানাই। এরপর অনেককেই অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ইউনিট বাঁধনের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বলেন, গত শুক্রবার শহীদুল্লাহ হল বাঁধনের প্রোগ্রামে আমি গিয়েছিলাম। প্রোগ্রাম শেষে হলে আসার পর ওই দিন রাত থেকেই পেটের পীড়া ও পাতলা পায়খানা হয়। স্বাভাবিকভাবে মনে করেছি, এটা এমনিতেই হয়েছে। কিন্তু শনিবার দুপুরের দিকে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। এ অবস্থায় মেডিকেলে যাওয়ার জন্য বের হয়ে হল গেটে যাওয়ার পর বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে হলে আসি।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর জানতে পারি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল বাঁধনের নবীনবরণ অনুষ্ঠানের সরবরাহ করা খাবার খেয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী একই সমস্যায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বনফুল সুইটস এন্ড কোং চানখারপুলের ম্যানেজার আল আমিন বলেন, শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা ১৪৫ পিস পিঠা নিয়েছেন, প্রতি পিঠা দুই ভাগ করে দুজন খেয়েছেন। সেই হিসাবে ২৯০ জন এই পিঠা খেয়েছেন। এ ছাড়া আমি আরও ৩০ পিস পিঠা অন্য এক জায়গায় বিক্রি করেছি। সেখান থেকে এ রকম কোনো অভিযোগ আসেনি। আমাদের সব শাখায় একই জায়গা থেকে পিঠা যায়, কোথাও কোনো সমস্যা হয় না। গতকাল উনারা যখন অভিযোগ নিয়ে হলের শিক্ষকসহ এসেছিলেন, তখন আমি তাদের চালান দেখিয়েছি, সবই দেখিয়েছি। আমরা মনে করি, আমাদের পিঠায় কোনো সমস্যা নেই।
এ বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হওয়ার খবর শোনার পর আমরা তাদের কাছে চিকিৎসক ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। শনিবার দুপুর থেকে নাকি তাদের এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে জানতে পেরেছি সন্ধ্যায়। শিক্ষার্থীরা সন্দেহ করছে যে গত শুক্রবারের অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে এ রকম হয়েছে। কিন্তু এটা বলা যাচ্ছে না, আসলে কী কারণ।