ইউক্রেন যুদ্ধে জয়লাভ না করা পর্যন্ত রাশিয়াকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে মস্কোতে এক বৈঠকে এই সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন হুই।
রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সৈন্য মোতায়েনে দুই দেশের নেতা কিম জং উন ও ভ্লাদিমির পুতিনের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন চো সন হুই। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের ঐতিহ্যবাহী, ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ইতিহাসের পরীক্ষিত পথে যাত্রা শুরু করেছে আজ … যা অদম্য সামরিক কমরেডশিপের সম্পর্কে নতুন ধাপে পদার্পণ করেছে।’’
চো সন হুই বলেন, পিয়ংইয়ংয়ের কোনও সন্দেহ নেই যে, পুতিনের ‘‘বুদ্ধিদ্বীপ্ত নেতৃত্বে’’ রাশিয়ার সেনাবাহিনী এবং জনগণ তাদের রাষ্ট্রের সার্বভৌম অধিকার ও নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য পবিত্র লড়াইয়ে মহান বিজয় অর্জন করবে।
তিনি বলেন, ‘‘এবং আমরা আশ্বস্ত করছি, বিজয়ের দিন পর্যন্ত আমরা দৃঢ়ভাবে আমাদের রুশ কমরেডদের পাশে থাকব।’’ বৈঠকে চো সন হুইকে স্বাগত জানিয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ‘‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’’ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি হয়েছে।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউক্রেন গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া রাশিয়ায় প্রায় ১০ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে বলে যে বিবৃতি দিয়েছে সেই বিষয়ে পরিষ্কার করে বলেননি কিছু ল্যাভরভ কিংবা চো সন হুই। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শুক্রবার পৃথকভাবে বলেছেন, এই ধরনের বিবৃতি সম্পর্কে ইতোমধ্যে যা বলা হয়েছে, তাতে যোগ করার মতো নতুন কিছু তথ্য তার হাতে নেই।
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, রাশিয়ায় মোতায়েন করা উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের মধ্য থেকে প্রায় ৮ হাজার সৈন্য কুরস্ক অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। ইউক্রেনীয় সেনারা গত আগস্টে সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার এই অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল। আগামী দিনে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এসব সৈন্য অংশ নিতে পারে বলে জানান তিনি।
ল্যাভরভ বলেছেন, ‘‘পশ্চিমাদের ন্যাটোকে পূর্বে সম্প্রসারণের এবং প্রকাশ্য বর্ণবাদী শাসনকে উৎসাহিত করার ফলে রাশিয়ান সবকিছুকে নির্মূল করতে বর্তমানে ইউক্রেনে যা দেখা যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের কোরিয়ান বন্ধুদের নীতিগত অবস্থানের জন্য আমরা তাদের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।’’
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন হুই বলেন, গত জুনে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার নেতাদের স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় উভয় দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করা হবে; যার মধ্যে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা জোরদার করার বিষয়টিও রয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা রাশিয়া এখন পর্যন্ত নিজ ভূখণ্ডে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের উপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার কিংবা সরাসরি নিশ্চিত করেনি। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, কিম জং উনের সঙ্গে চুক্তি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা রাশিয়ার সিদ্ধান্ত।
দোভাষীর মাধ্যমে টেলিভিশনে কথা বলার সময় উত্তর কোরিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন হুই তার দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া পারমাণবিক হামলার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছেন। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে কোনও নথি সরবরাহ করতে পারেননি তিনি।