বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গত ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৯ জন নিহত হয়েছেন। এটি বাংলাদেশে হিন্দু বিরোধী ‘সাম্প্রদায়িক নৃশংসতার’ অংশ বলে মনে করে সংগঠনটি। ঐক্য পরিষদের দাবির সঙ্গে একমত নয় সুইডেনভিত্তিক অলাভজনক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজ। পত্রিকাটি এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানায়, শুধু ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে ৯ হিন্দু হত্যা হয়নি।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দাবি অনুসারে নিহত ৯ জন হলেন প্রদীপ কুমার ভৌমিক, সন্তোষ চৌধুরী, টিঙ্কু রঞ্জন সাহা, অজিত সরকার, মৃনাল কান্তি চ্যাটার্জি, স্বপন বিশ্বাস, সুশান্ত সরকার, হারাধন রায় ও রিপন চন্দ্র শীল। নিহতদের মধ্যে তিন ব্যক্তি ৪ আগস্টে নিহত হন, তিনজন ৫ আগস্ট এবং সরকারের পতনের পর মৃত্যু ঘটে তিন জনের।
ঐক্য পরিষদের দাবির প্রেক্ষিতে নেত্র নিউজ অনুসন্ধান করে। তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব মৃত্যুতে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যের স্পষ্ট লক্ষণ নেই। বরং সাতটি মৃত্যুর ঘটনা রাজনৈতিক প্রতিশোধ, জনতার সহিংসতা এবং অপরাধমূলক হত্যার কারণেই ঘটেছে বলে প্রমাণ মেলে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত আক্রোশ ও জমিসংক্রান্ত কারণে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
নেত্র নিউজ তাদের প্রতিবেদনে ২০টিরও বেশি সরাসরি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সাক্ষী, নিহতের পরিবার, সহযোগীদের সঙ্গে কথোপকথন, স্থানীয় সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি আঞ্চলিক ঐক্য পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা। এ ছাড়া প্রতিবেদন তৈরিতে তারা সরকারি রেকর্ড, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, পূর্বে প্রকাশিত হয়নি, এমন মিডিয়া সাক্ষাৎকারের তথ্যও ব্যবহার করেছে।
সরকারি রেকর্ড ও সংবাদমাধ্যমের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে নেত্র নিউজ জানায়, ৫ আগস্টের আগে-পরে নিহত আনুমানিক এক হাজার মানুষের মধ্যে তিন ডজনেরও কম মানুষ, যাদের মধ্যে প্রায় ৩ শতাংশ হিন্দু। এই অনুপাত বাংলাদেশের মোট ৮ শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক নগণ্য। তবু ঐক্য পরিষদ ৯ জন হিন্দু মৃত্যুর ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় বিদ্বেষ বলে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে। নেত্র নিউজ প্রতিটি হত্যাকাণ্ড আলাদাভাবে ব্লিশেষণ করেছে, প্রকাশ করেছে সত্যিকার তথ্য। এতে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক কারণে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ মেলেনি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কিছু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হামলার খবর প্রকাশ করেছে, যা হিন্দুদের ব্যবসা, বাড়িঘর ও জীবিকাকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে বলে মনে হয়। এর ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায় ঐতিহাসিকভাবে শেখ হাসিনার আওয়ামী সমর্থক প্রধান শক্তি। তবে সংগঠিত মুসলিম গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে পরিকল্পিত হিন্দুবিরোধী সহিংসতার প্রমাণ সামান্যই পাওয়া গেছে।
গত কয়েক মাসে ঐক্য পরিষদের সংবাদ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। নেত্র নিউজের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬ আগস্ট থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত এক্স (আগের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে ১ কোটিরও বেশি সমন্বিত অনুসারীর কাছে ঐক্য পরিষদের বিবৃতি শেয়ার করা হয়েছে। ১ আগস্ট থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে গুগল নিউজে অন্তত ১৩৩টি ইংরেজি সংবাদ প্রবন্ধ ঐক্য পরিষদের বক্তব্য উল্লেখ করেছে, যেখানে রয়টার্স, এপি ও আল জাজিরার মতো গণমাধ্যমও রয়েছে।