সারা বিশ্বে জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা। এতে খরচ হবে ২০০ লাখ কোটি ডলার। এমনটাই উঠে এসেছে এক গবেষণায়।
তবে অযৌক্তিক মনে হলেও ‘জিয়োফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপতে দাবি করা হয়, বছরে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো বিশ্বের তাপমাত্রা অনেকাংশেই কমিয়ে দিতে পারে।
প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, চকচকে হীরার গুঁড়ো সূর্যরশ্মির উপর পড়লে তা অনেকাংশেই প্রতিফলিত হয়ে বায়ুমণ্ডলের বাইরে চলে যাবে। ফলে তাপও কমবে। ওই গবেষকদের বিশ্বাস, যদি ৪৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই প্রক্রিয়া চালানো যায়, তা হলে এই প্রক্রিয়া পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় ২.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট অবধি কমাতে পারে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা নয়। এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। কারণ, পুরো প্রক্রিয়াটির যেমন খরচসাপেক্ষ তেমনই শ্রমসাপেক্ষ।
গবেষকরা মনে করেন, ৪৫ বছর ধরে হীরার গুঁড়ো ছড়িয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমাতে হলে প্রায় ২০০ লাখ কোটি ডলার খরচ করতে হতে পারে। যে কারণে অনেকেই মনে করছেন, শুধুমাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে এবং পরীক্ষা করে দেখার জন্য এত টাকা খরচ করা একেবারেই অযৌক্তিক। যদিও গবেষকদের যুক্তি, এই মুহূর্তে পৃথিবীতে জলবায়ু সঙ্কট যে ভয়াবহ গতিতে বাড়ছে, তা মোকাবিলা করার জন্য এই খরচ কিছুই নয়।
গবেষকেরা আরও মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সম্ভাব্য সমস্ত পরীক্ষা করা উচিত, তা সেই পরীক্ষাগুলি যতই অবাস্তব বলে মনে করা হোক না কেন। গবেষণাপত্র অনুযায়ী, বায়ুমণ্ডলে হীরার গুঁড়ো ছড়ানোর প্রক্রিয়াটি ‘স্ট্রাটোস্ফিয়ারিক অ্যারোসল ইঞ্জেকশন’ নামে পরিচিত। পুরো বিষয়টি ‘সোলার জিয়োইঞ্জিনিয়ারিং’-এর অধীনে পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় সূর্যালোককে প্রতিফলিত করতে এবং তাপ শোষণকে কমাতে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ক্ষুদ্র কণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, হীরার ধূলিকণার পাশাপাশি সালফার-সহ অন্যান্য আরও অ্যারোসল বায়ুমণ্ডলে ছড়ালে তার প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছিলেন ওই গবেষকেরা। কোন উপাদান বাস্তব পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভাল কাজ করবে তা নির্ধারণ করতেই পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হচ্ছিল। অ্যারোসোলগুলি সূর্যের আলোকে কতটা ভালোভাবে প্রতিফলিত করে এবং কত ক্ষণ বায়ুতে ভেসে থাকতে পারে তা দেখা হচ্ছিল পরীক্ষার মাধ্যমে। পাশাপাশি, কোন ধূলিকণা তাড়াতা়ড়ি জমাট বাঁধছে, তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হয়।
ওই গবেষণাপত্র অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরের ওই পরীক্ষায় সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে হিরের ধুলোকণায়। গবেষকেরা জানিয়ছেন, হীরার কণাগুলি জমাট বাঁধা প্রতিহত করে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষণ উঁচুতে ভেসে থাকতে সক্ষম হয়েছে। অন্যান্য অ্যারোসোল অ্যাসিড বৃষ্টিতে পরিণত হলেও হিরের ধূলিকণা তা এড়িয়ে গিয়েছে। জমাট বাঁধার দিক দিয়ে সালফার ভালো অ্যারোসল না হলেও হীরা গুঁড়োর ভালো ব্যবহারিক বিকল্প হতে পারে।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ার ডগলাস ম্যাকমার্টিন ব্যাখ্যা করে বলেন, সালফারের দাম এবং তার অ্যারোসল তৈরির খরচ কম হওয়ায় এই উপাদানও ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর বায়ুমণ্ডলে সালফার কণাগুলি কীভাবে আচরণ করে, তা দেখেও এই সালফার ব্যবহারের সঙ্গে মতানৈক্য প্রকাশ করেছেন অনেকে। সালফার একটি গ্যাস হওয়ায় হিরের ধূলিকণার মতো তা ভারী হবে না। ফলে সহজেই তা বিমান থেকে বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই ধরনের পরীক্ষা করার আগে পৃথিবীতে তার পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব কতটা পড়বে তা দেখে নেয়া প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল নিয়ে বিজ্ঞানী-পরিবেশবিদদের নানাবিধ পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ নতুন নয়। জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্টে বিজ্ঞানীদের দাবি, রীতিমতো আশঙ্কার। তাদের মতে, জলবায়ুর এই চরম পরিবর্তনের একমাত্র কারণ হল মানুষ ও তাদের দ্বারা প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলা।