ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ এখন ওপারে। অন্য দিকে, এপারের গঙ্গায় উঠছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ! পদ্মার বাঁকা পথেই বাংলাদেশ থেকে ইলিশের ঝাঁক ঢুকছে ফারাক্কা ঘেঁষা গঙ্গায়। যার ফলে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ নিয়ে নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ইলিশ ধরতে ফারাক্কা ও বাসুদেবপুরের গঙ্গায় ভিড় জমাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। নদী বেয়ে তাঁরা টিনের ডোঙা, ফাঁস জাল ফেলতে ফেলতে যাচ্ছেন। কয়েক ঘণ্টা পরে জাল গোটাতে গোটাতে ফিরছেন। তাতে ছোট ইলিশ তো রয়েইছে, এক-একটা আবার সাতশো-আটশো গ্রামের।
এমনিতে ফারাক্কার গঙ্গায় ইলিশের বিশেষ দেখা মেলে না। কিন্তু অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে সমুদ্রের নোনা জল ছেড়ে ইলিশ পদ্মা, গঙ্গার মিষ্টি জলে ডিম ছাড়তে আসে। শমসেরগঞ্জে নিমতিতার আগে গঙ্গা থেকে পদ্মা বেরিয়েছে। সেই বাঁকা পথ ধরেই ফারাক্কা বাঁধের উজানে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রতি বছর ইলিশের বান ডাকে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ওঠার খবর পেয়ে নিমতিতা, ধুলিয়ান, হাজারপুর, অর্জুনপুর লাগোয়া সমস্ত ঘাটে ভোর থেকেই মৎস্যজীবীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। গঙ্গাপারে ভিড় জমাচ্ছেন পাইকারি বাজারের কারবারিরাও। মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে সরাসরি জলের দরে ইলিশ কিনে নিচ্ছেন তাঁরা।
সামনেই কালীপুজো, ভাইফোঁটা। উৎসবের মরসুমে বাজারে ইলিশ আসায় খুশি ক্রেতারাও। দামও আকাশছোঁয়া নয়। একেবারে ছোট ইলিশ মিলছে ৫০ টাকা কেজি দরে। তার ওজন ৬০-১০০ গ্রাম। ২০০ টাকার ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে বাসুদেবপুর, ফারাক্কা ও শমসেরগঞ্জের পাইকারি বাজারে। আর একটু বড় হলে দাম মেরেকেটে হাজার টাকা। বাসুদেবপুরের মৎস্যজীবী গৌতম হালদার বলছেন, ”বছর পাঁচেক পর আবার এত ইলিশ ধরা পড়েছে। বেশির ভাগ ছোট সাইজের। তবে বড় সাইজের ইলিশও উঠছে। নদীপারে পাইকারি দামে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ ক্রেতারা খুব কম দামে ইলিশ পাচ্ছে।”
যদিও মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে ইলিশ ধরা আসলে বেআইনি। এই সময়টা ইলিশের প্রজননের সময়। সেই কারণেই এখন বাংলাদেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা বঙ্গেও রয়েছে। কিন্তু কঠোর নজরদারিতে ও পার বাংলার প্রশাসন যে ভাবে নিষেধাজ্ঞা মানতে মৎস্যজীবীদের বাধ্য করতে পেরেছে, এ রাজ্যে সে ভাবে তা মেনে চলা হয় না বলেই মনে করছেন মৎস্য দফতরের একাংশ। খোকা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, জানেন স্থানীয় মৎস্যজীবী প্রসেনজিৎ হালদার। তিনি বলেন, ”জানি এটা। কিন্তু ইলিশ এখানে খুব একটা মেলে না। এত কিছু মানতে গেলে তো পেটে ভাত জুটবে না। এই সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে? যা পাচ্ছি, তা-ই ধরছি।”