ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে হত্যা, গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলার বিচার আনুষ্ঠানিক (অভিযোগ দাখিল ও গঠন, সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক) শিগগির শুরু হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত গুমের ঘটনা নিয়ে অভিযোগেরও বিচার হবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে। বিচারকাজ শুরুর পর আগামী ছয় মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেকের রায়ের প্রত্যাশা করছে প্রসিকিউশন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল), ১৯৭৩ আইনটি করা হয়। ২০১০ সালের মার্চে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর এই আইনে বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতার ফাঁসির আদেশ ও তা কার্যকর হয়। সময়ের পরিক্রমায় এখন গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের তৈরি আইনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে।
বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এখন পর্যন্ত হাজারের বেশি মানুষ নিহতন হয়েছে। যাদের বেশিরভাগের মৃত্যু হয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে। আহত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। এরই মধ্যে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা অন্তত ১০০ জন আহত ব্যক্তির জবানবন্দি নিয়েছে। আহত আরও অনেকের জবানবন্দি নেওয়া হবে। তাদের সবাইকে সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে সাক্ষ্য দেবেন নিহতদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হবে ঘটনার সময়ের ভিডিও, হত্যাকা-ের পরিকল্পনা ও নির্দেশনার আসামিদের মধ্যে অডিও রেকর্ড।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গণহত্যার অভিযোগ তোলা হয় এবং বিচার শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে চেয়ারম্যান করে ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলসহ প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাও পুনর্গঠন করা হয়। গত বুধবার পর্যন্ত প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থায় ১০০টির মতো অভিযোগ জমা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০টির মতো অভিযোগ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের।