Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফাইল গায়েব হচ্ছে সংসদ থেকে

 

chardike-ad

আর্থিক ও সংসদ সচিবালয়ের নেয়া পুরনো অনেক সিদ্ধান্তের ফাইল গায়েব করা হচ্ছে। এরইমধ্যে শতাধিক ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব ফাইলের বেশির ভাগই আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আরও ফাইল গায়েব করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে।

ইতিমধ্যে যেসব ফাইল গায়েব হয়েছে তাতে শতাধিক কোটি টাকার হিসাব রয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এসব ফাইল গায়েবের সঙ্গে সম্পৃক্ত। চতুর্থ শ্রেণির অনেক কর্মচারীকে টাকার বিনিময়ে ফাইল গায়েবের মিশনে নামানো হয়েছে। ৫ই আগস্টের পর অনেক কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করছেন না। তারা বাইরে থেকে টাকা দিয়ে কর্মচারীদের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ফাইল গায়েব করছেন। তবে এসবই হচ্ছে খুবই গোপনে। সংসদ সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তারা জানান, স্পিকারের দপ্তর, সংসদ সচিবের দপ্তর ও কমন শাখার অনেক ফাইলের হদিস নেই। আবার কমিটি শাখার অনেক ফাইল রাতারাতি গায়েব হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ফাইলে কমিটির নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাবিত হয়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর ফাইল সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ আরও অন্তত ১০টি স্থায়ী কমিটির ফাইল সংসদ সচিবালয় থেকে গায়েব হয়ে গেছে।

বর্তমান সরকারের হাতে যেন এসব ফাইল না যায় সে চেষ্টার অংশ হিসেবে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে এসব কিছুই হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৪৮টি সংসদীয় কমিটি ছিল। এসব কমিটির বেশির ভাগই কোনো মিটিং করেনি। অথচ মিটিংয়ের নামে অর্থ বরাদ্দ ও কমিটি সদস্যদের নামে মিটিংয়ে হাজিরার টাকা দেয়া হয়েছে। এ ধরনের বেশ কিছু ফাইল গায়েব করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অথচ এসব ফাইল ৫ই আগস্টের পরেও দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন তারা।

সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা  বলেন, এরইমধ্যে সংসদ সচিবালয়ের অনেক কর্মকর্তার নামে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। তাদের নামে আরও মামলার শঙ্কা রয়েছে। ১২ই অক্টোবর ভারতে পালানোর সময় জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব একেএমজি কিবরিয়া মজুমদারকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তের পুটিয়া এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এ ধরনের শঙ্কা থেকে আরও কয়েক কর্মকর্তা আত্মগোপনে রয়েছেন। তারাও বিভিন্ন উপায়ে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। এ ধরনের বেশির ভাগ কর্মকর্তার বাসা ছিল সংসদ ভবনের ভেতরে। ওইসব বাসা এখন খালি। লুট হওয়ার পর তারা এসব বাসায় আর ফেরেননি। যারা নিজেদের অপরাধী মনে করেন না তারা তাদের বরাদ্দকৃত বাসা মেরামত ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাসায় উঠেছেন।

সংসদ সচিবালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী  জানান, প্রায় প্রতিদিনই সংসদ সচিবালয় থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যাচ্ছে। ভেতরে পুরো বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। ৫ই আগস্টের দোহায় দিয়ে এসব ফাইল টাকার বিনিময়ে গায়েব করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বাইরে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছেন। পরে ভেতরে এসে নির্দিষ্ট ফাইলটি সরিয়ে রাখছেন। মূলত ওইসব ফাইল নিয়ম ও আইন মেনে তৈরি করা ছিল না। এসব ফাইলের বেশির ভাগই হচ্ছে আর্থিক সংশ্লিষ্ট। এসব নজরদারি করার মতো অবস্থা সংসদ সচিবালয়ের নেই। কারণ সচিবালয়ের ভেতরে চেইন অব কমান্ড বলে কিছু নেই। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেউ কেউ অফিস করছেন আবার কেউ কেউ অফিসে হাজিরা দিয়েই চলে যাচ্ছেন।