বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২৯তম আসরে জিসোক বিভাগের প্রথম পুরস্কার জিতলো ভারতের আসাম রাজ্যের নারী রিমা দাস পরিচালিত ‘ভিলেজ রকস্টারস টু’। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাতে বুসান সিনেমা সেন্টারের বিআইএফএফ আউটডোর থিয়েটারে সমাপনী অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অসমিয়া ভাষায় নির্মিত ‘ভিলেজ রকস্টারস টু’ হলো রিমা দাস পরিচালিত ‘ভিলেজ রকস্টারস’ (২০১৭) চলচ্চিত্রের সিক্যুয়েল। এর গল্প আসামের ছোট্ট অজপাড়াগাঁয়ের কিশোরী ধুনুর রকতারকা হওয়ার স্বপ্নকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। দারিদ্র্যের কষাঘাতে বাধাগ্রস্ত হতে থাকে তার সেই স্বপ্ন। ধুনু চরিত্রে আবারও অভিনয় করেছেন ভনিতা দাস। তার মায়ের ভূমিকায় ফিরেছেন বাসন্তি দাস। আর বড় ভাইয়ের চরিত্রে মানবেন্দ্র দাসকে ফের দেখা গেছে।
বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রয়াত প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কিম জিসোক স্মরণে প্রদান করা হয় জিসোক পুরস্কার। কমপক্ষে তিনটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করা এশিয়ার প্রতিষ্ঠিত নির্মাতাদের নতুন কাজ জায়গা পেয়ে থাকে এই বিভাগে। এবারের আসরে দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছে তাইওয়ানের টম শু-য়ু লিন পরিচালিত ‘ইয়েন অ্যান্ড আই-লি’। জিসোক বিভাগে বিচারক ছিলেন কান চলচ্চিত্র উৎসবের সিনেমা বিভাগের পরিচালক ক্রিস্টিয়ান জেন, শ্রীলঙ্কান পরিচালক প্রসন্ন ভিথানাগে ও দক্ষিণ কোরিয়ান পরিচালক শিন সুয়োন।
এশিয়ার প্রতিশ্রুতিশীল ও উদীয়মান নির্মাতাদের প্রথম ও দ্বিতীয় চলচ্চিত্রের প্রতিযোগিতা বিভাগ নিউ কারেন্টসের প্রথম পুরস্কার জিতেছে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্ক রি-য়ুং পরিচালিত ‘দ্য ল্যান্ড অব মর্নিং কাম’। দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে মিয়ানমারের দি মো নায় পরিচালিত ‘মা – ক্রাই অব সাইলেন্স’।
নিউ কারেন্টস বিভাগে বিচারকদের প্রধান ছিলেন ইরানি পরিচালক মোহাম্মদ রাসুলফ। তার নেতৃত্বে বিচারক প্যানেলে কাজ করেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী কানি কুসরুতি, দক্ষিণ কোরিয়ান পরিচালক লি মিয়াং শে, চীনা অভিনেত্রী চো ডং ইয়ু, রটারডাম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক ভানিয়া কালুজারসিচ।
বিআইএফএফ আউটডোর থিয়েটারে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা) শুরু হয় লালগালিচা অনুষ্ঠান। এরপর ছিল পুরস্কার বিতরণ। সবশেষে রাত ৮টায় দেখানো হয় উৎসবের সমাপনী চলচ্চিত্র ‘স্পিরিট ওয়ার্ল্ড’। এটি পরিচালনা করেছেন সিঙ্গাপুরের এরিক ক্যু। এতে মুখ্য চরিত্রে আছেন বর্ষীয়ান ফরাসি অভিনেত্রী ক্যাথেরিন দেন্যুভ।
গত ২ অক্টোবর শুরু হয় ১০ দিনের বুসান চলচ্চিত্র উৎসব। উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হয় কিম সাং-মান পরিচালিত নেটফ্লিক্সের ‘আপরাইজিং’। এটি প্রযোজনা করেছেন পার্ক-চ্যান উক। এবারই প্রথম স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের কোনও ছবির মধ্য দিয়ে বুসানের পর্দা উঠলো।
এবারের অফিসিয়াল সিলেকশনে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন দেশের ২২৪টি চলচ্চিত্র। এরমধ্যে অ্যা উইন্ডো অন এশিয়ান সিনেমা বিভাগে বাংলাদেশি ছবি ‘সাবা’র এশিয়ান প্রিমিয়ার হয়েছে। মাকসুদ হোসেনের পরিচালনায় এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মেহজাবীন চৌধুরী। উৎসবে অংশ নিয়েছেন তারা।
এবারের আসরে ওপেন সিনেমা বিভাগে দেখানো হয় ভারতের দক্ষিণী ছবি ‘কালকি ২৮৯৮ এডি’। বুসানে এর প্রদর্শনীতে ছিলেন দুই প্রযোজক স্বপ্না ও প্রিয়াঙ্কা দত্ত। এতে অভিনয় করেছেন প্রভাস, অমিতাভ বচ্চন, দীপিকা পাড়ুকোন, কমল হাসান, দিশা পাটানি ও শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
ওপেন সিনেমা বিভাগের আরেক আকর্ষণ ছিল বিটিএস ব্যান্ডের সদস্য আরএম ও তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম তৈরির ঘটনা নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আরএম: রাইট পিপল, রং প্লেস’।
বুসানে এবার বর্ষসেরা এশিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের কুরোসাওয়া কিয়োশি। মরণোত্তর কোরিয়ান ফিল্ম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে আত্মহত্যা করা দক্ষিণ কোরিয়ান অভিনেতা লি সুন-কিয়নকে। স্পেশাল প্রোগ্রাম ইন ফোকাসে ছিল তার অভিনীত ছয়টি ছবি ও টিভি সিরিজ। এরমধ্যে অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ‘প্যারাসাইট’ অন্যতম।
বুসান উৎসবের অন্য শাখাগুলো হলো– গালা প্রেজেন্টেশন, আইকনস, কোরিয়ান সিনেমা টুডে, ওয়ার্ল্ড সিনেমা, ফ্ল্যাশ ফরওয়ার্ড, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল (স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র), মিডনাইট প্যাশন, অন স্ক্রিন এবং স্পেশাল স্ক্রিনিং।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, ২০২৫ সালে ৩০তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। চলবে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।