চলতি বছরের বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে তিন ধাপ অবনমন হয়েছে বাংলাদেশের। এক্ষেত্রে ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম।
ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল (৬৮তম) ও শ্রীলঙ্কা (৫৬তম)। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
গত শুক্রবার প্রকাশিত গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) বা বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪–এ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবস্থানও তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবছর আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও জার্মানভিত্তিক ভেল্ট হ্যুঙ্গার হিলফে যৌথভাবে এ সূচক প্রকাশ করে।
দেশভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের এবারের স্কোর ১৯ দশমিক ৪। গত বছর ১৯ স্কোর নিয়ে ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ঠাঁই হয়েছিল ৮১তম স্থানে।
অন্যদিকে ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতার দিক থেকে এ বছর ভারতের অবস্থান ১০৫তম, স্কোর ২৭ দশমিক ৩। ভারত এ বছর ছয় ধাপ এগিয়েছে। আর সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান ১০৯তম, স্কোর ২৭ দশমিক ৯। দেশটি গত বছরের তুলনায় সাত ধাপ পিছিয়েছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের অবস্থান ১১৬তম, স্কোর ৩০ দশমিক ৮। এটিও দুই ধাপ পিছিয়েছে।
একটি দেশে অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার—এই চারটি মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতীয়—যেকোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে এই সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে কোনো দেশের স্কোর শূন্য হলে বুঝতে হবে, সেখানে ক্ষুধা নেই। আর স্কোর ১০০ হওয়ার অর্থ, সেখানে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ। ক্ষুধা সূচক ১০ থেকে ১৯ দশমিক ৯-এর মধ্যে থাকলে ওই দেশ ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধায় আক্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীতে এসে বাংলাদেশ, মোজাম্বিক, নেপাল, সোমালিয়া ও টোগো তাদের স্কোর ২০১৬ সালের তুলনায় ৫ পয়েন্টেরও বেশি কমাতে সক্ষম হয়েছে। এরপরও বাংলাদেশে যে পরিমাণ ক্ষুধার্ত মানুষ আছে, তা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
চলতি বছরের সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম। আর পাঁচ বছরের কম বয়সী ১১ শতাংশ শিশুর উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কম।
এবারের সূচক অনুসারে ছয়টি দেশে উদ্বেগজনক পরিমাণে ক্ষুধা বিরাজ করছে। সূচকের সবচেয়ে নিচে থাকা ছয়টি দেশ হচ্ছে– বুরুন্ডি, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া, ইয়েমেন, চাদ ও মাদাগাস্কার।
জিএইচআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সার্বিকভাবে ক্ষুধা এখনো গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। নিম্নমানের খাদ্য, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে এ অঞ্চলে অপুষ্টি বাড়ছে; বিশেষ করে শিশুদের অপুষ্টির সমস্যা উচ্চ স্তরে রয়ে গেছে।