ইন্টারনেটের সুফলে কোরিয়াবাসীদের সংস্কৃতি ও তাদের মানুষের জীবনধারার প্রতি আমাদের দেশে বেশ আলোচনা হয়। বিশেষ করে তাদের ফিটনেস চোখে পড়ার মতো। আট থেকে আশি, কোরিয়ান মানেই ফিট। দেশটির জনসাধারন হোক অথবা রূপালী পর্দার কে-ড্রামায়, আনফিট লোক কমই চোখে পড়বে। কোরিয়ার বয়স্ক ব্যক্তিরা তরুণদের মতোই ফিট থাকে। বয়সের সাথে তাদের মাঝে ফ্যাট বা মেদ বাড়েনা বললেই চলে।
কোরিয়ানদের উজ্জ্বল স্কিন থেকে শুরু করে এমন সুস্থ থাকার রহস্য জানার আগ্রহও তাই অনেক। জেনে নেওয়া যাক, তাঁদের এমন ফিটনেসের কয়েকটি কারণ
হাঁটা অথবা সাইকেল
অধিকাংশ কোরিয়ানরা হাঁটতে ভালোবাসেন। কোনো স্থানে যাওয়ার জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্টের পরিবর্তে হেঁটে বা সাইকেলে যেতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন তাঁরা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কোরিয়ান মেয়েদের পায়ে তাই হিল জুতার বদলে ফ্ল্যাট শ্যু দেখা যায়। তাদের পছন্দের অনুষঙ্গও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্ট ওয়াচ, যেখানে প্রতিদিন মোট কত কদম হাঁটা হলো সে হিসাব থাকে।
সুগারহীন খাবার
মিষ্টি জাতীয় খাবারে আসক্তি নেই ছিপছিপে গড়নের কোরিয়ানদের। খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে তাঁদের পছন্দ তাজা ফল। প্রক্রিয়াজাত চিনিযুক্ত ডেজার্ট তাদের খাদ্যতালিকায় নেই। কেক, পেস্ট্রি খেলেও তাতে ফল, ইজুকি বিনসের মতো প্রাকৃতিক খাবারের টপিংস থাকে। তাছাড়া কোরিয়ানরা খাবারের পর প্রতিবেলায় কফি পান করেন। কফি মিষ্টি খাবারের ক্রেভিংস থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
ব্যালেন্সড ডায়েট
কোরিয়ানদের খাবারে মাংসের পরিমাণ একেবারেই সীমিত থাকে। খেলেও পাতলা স্লাইস বা বার্বিকিউ করে খেতে পছন্দ করেন। তখনও অবশ্য সাইড ডিশ হিসেবে থাকে একগাদা সবজির সালাদ। এভাবেই তাদের ডায়েটে প্রোটিন থেকে কার্বস সব কিছুরই সুষম বণ্টন থাকে। ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী দিনযাপন করা কোরিয়ানরা একদম নির্দিষ্ট সময়ে আহার গ্রহণ করেন।
সামুদ্রিক খাবারে অভ্যস্ত
স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি একটি সাধারণ কোরিয়ান খাবার হলো সি-উইড, যার উপস্থিতি স্যুপ থেকে শুরু করে রামেনের মতো কোরিয়ান রেগুলার ডিশগুলোতেও লক্ষ্য করা যায়।
অনেক খাবারের শুরুতেই তারা অ্যাপেটাইজার হিসেবে মিয়াক-গাক নামক সি উইডের তৈরি এক ধরণের স্যুপ খায়। যারা নতুন মা হয়েছেন, তাদেরকেও এই পুষ্টিকর স্যুপ খাওয়ানো হয়। তাছাড়া সি উইড প্রাকৃতিকভাবেই লবণাক্ত হওয়ায় এর পদে আলাদা করে প্রক্রিয়াজাত সাদা লবণ যোগ করার প্রয়োজন পড়ে না।
স্যুপ এবং স্টু
কোরিয়ার পরিচিত ডিশগুলোর মধ্যে রয়েছে কিমচি-জিগে, ডেনজং-জিগে, সুনডুবু- আর এ সবই স্যুপজাতীয় আইটেম। তেল-ঝোলে একাকার ভুনা তরকারি বা ভাজাভুজির পরিবর্তে সবজি, টফু আর ঝাল ঝাল গোচুজাংয়ের (মরিচের পেস্ট) বিভিন্ন স্যুপ এবং স্টু পছন্দ তাদের।
সবজির বিশেষত্ব
কখনো ট্রাডিশনাল কোরিয়ান কুইসিন খাওয়ার সুযোগ পেলে দেখবেন সেখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ সবজি। কোরিয়ানরা সবজি খেতে ভালোবাসেন। তাই মাছ, মাংস, ডিমের তুলনায় তাদের প্লেটে সবজি বেশি থাকে। প্রতিবেলায় মেইন ডিশের সাথে তাদের মেন্যুতে থাকে র্যাডিশ কিমচি, ম্যারিনেটেড স্পিনাচ বিন স্প্রাউটস, বিবিমবাপের মতো সবজিবহুল আইটেম। স্বাভাবিকভাবেই এতে ক্যালোরি কম খাওয়া হয় যা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
ঘরে তৈরি খাবার
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে বাড়ির খাবারের চাইতে ভালো আর কিছু হয় না। প্রক্রিয়াজাত খাবার, তেল-মশলার খাবার, ফাস্টফুড যতটা এড়িয়ে চলা যায় ততই ভালো। কোরিয়ানদের এখনও জাঙ্কফুড কাবু করতে পারেনি। আমাদের মতো প্লেটভর্তি ভাতের বদলে তারা ছোট ছোট সুশির আকারে ‘কিমবাপ’ খেয়ে থাকে। এতে ভাতের ক্রেভিংস (চাহিদা) যেমন মেটে, তেমনি অতিরিক্ত খাওয়াও হয় না।