Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব ডেস্ক।

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ইশিবা শিগেরু। তাঁকে প্রতিরক্ষানীতি–সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

chardike-ad

একসময় তিনি কেবল জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই পালন করেননি, দীর্ঘ সময় ধরে দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সদস্য থাকা অবস্থায় দেশের প্রতিরক্ষা খাতের বরাদ্দ বাড়াতে সরকারের ওপর ক্রমাগত চাপ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর জাপানের প্রতিরক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ যে নেবেন, অনেকেই সেটা স্বাভাবিক হিসেবে দেখেছিলেন।

প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করাই কেবল নয়, একই সঙ্গে আঞ্চলিক ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করে নিতেও একই রকম উৎসাহ ইশিবার মধ্যে সব সময় দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে দেওয়া এক বক্তব্যে উত্তর আটলান্টিক শান্তি চুক্তি ন্যাটোর অনুকরণে এশিয়া মহাদেশের জন্য নতুন একটি ন্যাটো জোট গড়ে নেওয়া নিয়ে বক্তব্য দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাছায়ার ভেতরে অবস্থান করা নিয়ে ইশিবা সন্তুষ্ট। সেই অবস্থান ধরে রাখতে তিনি বদ্ধপরিকর। ইশিবা স্বীকার করেন যে তিনি জাপান-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা জোটের দৃঢ় সমর্থক। তবে জোটকে সমতাপূর্ণ অংশীদার করে তোলার প্রচেষ্টার কথাও তিনি জানিয়েছেন।

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক এই দুই ধারণা নিয়ে এখন হঠাৎ করে মিত্রদের সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।

প্রতিরক্ষানীতির প্রাধান্যের ভিত্তিতে দেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার উদ্দেশ্যে নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং অতীতে একসময় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বপালন করা ইওয়াইয়া তাকেশিকে তিনি তাঁর মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ইশিবার আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাকাতানি গেন।

তবে প্রাথমিক এসব পদক্ষেপ শক্তিশালী জাপান গড়ে নেওয়ায় কতটা সহায়ক হবে, তা অবশ্য এখন আরও বেশি অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রথমত, সমতাপূর্ণ জোট গড়ে তোলার যে আকাঙ্ক্ষা ইশিবা ব্যক্ত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর বাধার মুখে শুরুতেই সেটাতে পড়তে হচ্ছে। ওয়াশিংটন পরোক্ষে হলেও স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছে যে সামরিক বাহিনীর অবস্থানসংক্রান্ত চুক্তি বদল করে নেওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। আর সেই চুক্তির সংশোধন ছাড়া সমতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা যে অধরাই থেকে যাবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

অন্যদিকে এশিয়ার ন্যাটো গড়ে তোলার যে আকাঙ্ক্ষা ইশিবা ব্যক্ত করেছেন, তা নিয়েও এখন সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুরুতেই এর বিরোধিতা করে বলেছেন, সে রকম কোনো জোটে যোগ দিতে নয়াদিল্লি আগ্রহী নয়। অন্যদিকে একমাত্র ফিলিপাইন ছাড়া দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশও ন্যাটোর অনুকরণে আঞ্চলিক একটি জোট গঠনের ধারণার সঙ্গে একমত নয়। এর প্রধান কারণ অবশ্যই সাম্প্রতিক সময়ে আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে চীনের গড়ে ওঠা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অর্থনৈতিক দিক থেকে চীন এখন আর জাপানের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই এবং অঞ্চলজুড়ে আছে চীনের বিশাল বিনিয়োগ। এর ফলে সেই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে এরা কেউ রাজি নয়।

এশিয়ার ন্যাটো গড়ে তোলার ধারণার পেছনে যে আছে চীনকে প্রতিহত করতে পারার আকাঙ্ক্ষা, সেটা এখন আর অলীক কোনো ভাবনা নয়। এর ফলে এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ মনে করছে, ন্যাটোর অনুরূপ জোট গড়ে তোলা হলে এবং সেই জোটে তারা যোগ দিলে দ্রুতই সেসব দেশ চীনের বিরাগভাজন হয়ে উঠবে।

এশিয়ার দেশগুলো আরও মনে করছে, এসব থেকে দূরে সরে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর তাই ইশিবার এশিয়ার ন্যাটো গড়ে তোলার ভাবনা বাস্তবায়িত হলে শেষ পর্যন্ত হয়তো দেখা যাবে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও ফিলিপাইনের বাইরে অন্য কোনো দেশ এতে যোগ দিচ্ছে না।

জাপানও এই বাস্তবতা এখন আঁচ করতে পারছে। সম্ভবত এ কারণেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইওয়াইয়া ঘোষণা দিয়েছেন, এশিয়ার জন্য সামরিক একটি জোট গঠনের চিন্তা জাপান করছে না। এর ফলে আমরা ধরে নিতে পারি, প্রতিরক্ষা নীতিমালার দিক থেকে বড় রকমের হোঁচট খাওয়ার মধ্যে দিয়ে দায়িত্বপালন শুরু করলেন জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী।