বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৪ মে) বাগেরহাটের পূর্ব বন বিভাগস্থ চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়ার ছিলা নামক স্থানে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের কর্মকর্তা, বনরক্ষী, মোড়েলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক সুলতান, মোড়েলগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আমরবুনিয়া এলাকায় পৌঁছায়। তবে সন্ধ্যা হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ফায়ার ফাইটিংয়ের মেশিন ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি।
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোঃ আবু তাহের মিয়া বলেন, বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে স্থানীয় জেলেরা সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনাঞ্চলে আগুন দেখতে পান।
তিনি আরো বলেন, আমুরবুনিয়া ফাঁড়ির কাছেই আগুন লেগেছে। বেশ বড় এলাকা। অন্তত ২ কিলোমিটারজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। যেভাবে আগুন ছড়িয়েছে সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৪টি টহল ফাঁড়ির বনকর্মীরা স্থানীয়দের নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বেল্লাল ফকির নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, লোকালয় থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে আগুন ধরেছে। পাতার মধ্য থেকে আগুন ওপরে উঠছে। বড় বড় গাছ পুড়ছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মোংলা উপজেলার স্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়মুজ্জামান বলেন, বন বিভাগের মাধ্যমে খবর পেয়ে মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট নিয়ে আমরবুনিয়া এলাকায় পৌঁছেছি। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যেখানে আগুন লেগেছে, সেখান থেকে পানির দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। যার কারণে আমরা এখন পর্যন্ত আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করতে পারিনি। সন্ধ্যা হওয়ায় আমরা ফিরে এসেছি। রোববার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বনের মধ্যে প্রবেশ করে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করবো।
আগুন নিয়ন্ত্রণে যাওয়া সিপিজি সদস্য মণিময় মণ্ডল বলেন, বনভূমির বিভিন্ন স্থানে এখনও আগুন জ্বলছে। আগুনের প্রচণ্ড তাপে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। কাছাকাছি কয়েকটি জায়গার আগুন আমরা নেভাতে পারলেও এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন যাতে নতুন এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সন্ধ্যার ভেতর বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা শুকনো গাছ অপসারণ করেছি। বিভিন্ন স্থানে ছোট ড্রেন কেটে রেখেছি। গহীন বনে অনেক হিংস্র প্রাণী আছে এবং একই সঙ্গে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আগুন নেভানোর কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শোনার পর বন বিভাগ ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা সেখানে ছুটে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এখনো সেখানে আগুন জ্বলছে। কাল সকাল থেকে আবারও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হবে।
বনের মধ্যে কীভাবে আগুন লেগেছে বা কি পরিমাণ জায়গায় আগুন লেগেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগুন লাগার কারণ এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি। কি পরিমাণ জায়গা জুড়ে আসলে আগুনের ব্যাপ্তি তাও জানা যায়নি। আগুনের পরিমাণ, ক্ষয়ক্ষতি ও আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে জানতে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হবে এবং তাদের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।