ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে আজ থেকে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের প্রথম ধাপে আজ ২১টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হচ্ছে।
সেই হিসেবে আজ পশ্চিমবঙ্গের তিন জেলা: কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে ভোটগ্রহণ চলছে। এছাড়াও লোকসভার সবচেয়ে বড় আসন সমৃদ্ধ রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ৮টি আসন: সাহারানপুর, বিজনর, কেরানা, মুজাফফরনগর, নাগিনা (তফসিলি আসন), মোরাদাবাদ, রামপুর এবং পিলিভীত, রাজস্থানের ১২টি আসন: চুরু, নাগৌরাম, গঙ্গানগর, ঝুনঝুনু, বিকানের, সিকার, জয়পুর রুরাল, জয়পুর, আলওয়ার, ভরতপুর, কারৌলি-ধলপুর এবং দাউসা, উত্তরাখণ্ডের ৫টি আসন: থেরি গাড়োয়াল, গাড়োয়াল, আলমোরা(তফসিলি জাতি), নৈনিতাল-উধমসিং নগর এবং হরিদ্বার, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুরের একটি আসন, মেঘালয়ের দুটি আসন, ছত্রিশগড়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ, জম্মু-কাশ্মীর, লাক্ষাদ্বীপ এবং পুদুচেরির একটি করে আসনে ভোট হচ্ছে আজ। মণিপুরে দীর্ঘদিন ধরে চলা সহিংসতার কারণে সেখানে একটি আসন তথা ইনার মণিপুর আসনে আজ ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই চার রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ, উড়িষ্যা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমে আজ ভোটগ্রহণ চলছে।
প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার আসনের নির্বাচন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের এই তিনটি আসনেই জয় পেয়েছিলো দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আর এবার পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এই আসনগুলোতে জয়লাভের জন্য তুমুলভাবে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে।
কোচবিহারে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে লড়াই হবে সিতাইয়ের বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জগদীশ রায় বসুনিয়ার। জলপাইগুড়িতে বিজেপির বিদায়ী সংসদ সদস্য জয়ন্ত রায়ের সঙ্গে লড়াই হবে ধূপগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের। তবে আলিপুরদুয়ার আসনে প্রার্থী বদল করেছে বিজেপি। বিদায়ী সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লার বদলে এই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গাকে। তার সঙ্গে লড়াই হবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রকাশ চিক বরাইকের।
সাত ধাপের এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস, দিল্লির আম আদমি পার্টি, উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি, মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজ পার্টি, বিহারের লালু প্রসাদ-তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), জম্মু-কাশ্মীরের ফারুক আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কনফারেন্স, মেহবুবা মুফতির পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) সহ একাধিক রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে ।
এবছর দেশটিতে রেকর্ড ১ কোটি ৮০ লাখ ভোটার এবার প্রথম ভোট দিয়ে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ইতিহাস শুরু করবেন। সেই সঙ্গে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ১৯ কোটি ৭৪ লাখ। সব মিলিয়ে তরুণ ভোটারদের সংখ্যা প্রায় ২১ কোটি।
ভারতে এবার শতবর্ষী ভোটারেরও রেকর্ড হচ্ছে। বয়স একশ বছরের বেশি, এমন ২ লাখ ১৮ হাজার ভোটার এবারও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন।
এদিকে, নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ, সিআইএসএফ সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। শুধু তাই নয়, আকাশপথে এবং ড্রোনের সাহায্যেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
এবছর বিজেপির মূল লক্ষ্য আবারো ক্ষমতায় আরোহণ করে হ্যাটট্রিক জয় উদযাপন করা। এজন্য বিজেপির নির্বাচনী স্লোগান: আব কি বার, ৪০০ পার। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের মূল লক্ষ্য দীর্ঘদিন ধরে ভারতের যাবতীয় সমস্যা যেগুলোতে বিজেপি সরকার কোনো জোর প্রদান করেনি সেগুলো সমাধান করা। এখন দেখার বিষয়, কে বসতে যাচ্ছেন এ বছর দিল্লির মসনদে? তা জানা যাবে ৪ জুন ভোটগণনার দিন।