বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা যেকোনো শিক্ষার্থীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একক ও গুচ্ছাকারে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াতে এই ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে নেয়া হয়। ৮ ঘন্টার এই ম্যারাথন পরীক্ষার স্থানীয় নাম সুনেউং, পুরো নাম কলেজ স্কলাস্টিক এবিলিটি টেস্ট (CSAT).
এই ভর্তি পরীক্ষা কোরিয়ান শিক্ষার্থীদের শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির যোগ্যতাই নয়, বরং তার চাকরি, আয়, বাসস্থান এমনকি সম্পর্কেরও ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ১৮ বছর বয়সী পরিক্ষার্থী কো ইউন-সাহ বলেন,”আমাদের কাছে সুনেউং ভবিষ্যতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দরজা। কোরিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এই একদিনের জন্য আমরা নিজেদের ১২ বছর ধরে তৈরি করি। আমি এমন লোককেও চিনি যে এই পরীক্ষা ৫ বার দিয়েছে।”
প্রতি বছর নভেম্বরে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন পুরো দেশ নীরব হয়ে পড়ে। ব্যস্ততম রাজধানীও স্থবির হয়ে পড়ে যেহেতু দোকান-পাট, ব্যাংক বন্ধ থাকে। এমনকি স্টক মার্কেটও এদিন দেরি করে খোলা হয়। মিলিটারির সহায়তায় কনস্ট্রাকশনের কাজ, বিমান চলাচল বন্ধ থাকে অনেকটুকু সময়৷
এই নীরবতা ভাঙে হঠাৎ হঠাৎ সাইরেনের শব্দে, মোটরসাইকেলের শব্দে। এগুলো আসলে পুলিশের যানবাহন যেগুলো পরিক্ষার্থীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। অনেক বাবা-মায়ের এদিন পুরো সময় কাটে চার্চ বা বৌদ্ধ মন্দিরে প্রার্থনা করে। সবকিছু এতই নীরব থাকে যে ইভেন নিরাপত্তাকর্মীদেরও নির্দেশনা দেয়া থাকে যেন তাদের বুটের শব্দ শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা না করে।
এই পরীক্ষার সবকিছুই চিত্তাকর্ষক। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে পুরো কোরিয়া থেকে প্রায় ৫০০ শিক্ষককে নির্বাচন করে পাহাড়ি গ্যাংওন প্রদেশের গোপন একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এক মাসের জন্য তাদের ফোন জব্দ করে রাখা হয়। পুরো দুনিয়ার সাথেই তারা পুরো এক মাস বিচ্ছিন্ন থাকে।
আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষার এক মাস পর প্রত্যেক স্টুডেন্টের রেজাল্ট জাতীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়৷ কিন্তু পরীক্ষার কিছুদিনের মধ্যেই পরীক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেদের ফলাফল জানতে পারে যাতে তারা তুলনা করে দেখতে পারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা সে অর্জন করতে পেরেছে কিনা।
কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন কেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এতটা কঠিন কোরিয়ায়?
দক্ষিণ কোরিয়া পৃথিবীর অন্যতম অধিক সংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মানুষের দেশ। এখানের এক তৃতীয়াংশ বেকারেরও ন্যূনতম একটি ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি আছে।বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আসলে শুধু যেকোনো একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে চায় না। তাদের বেশিরভাগেরই স্বপ্ন থাকে ‘স্কাই’ (SKY). কোরিয়ার সেরা তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সংক্ষেপ থেকে এই নাম; সউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কোরিয়া ইউনিভার্সিটি ও ইয়োন্সেই ইউনিভার্সিটি। এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়কে কোরিয়ার হার্ভাড, অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ হিসেবে দেখা হয়।
স্কাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ চাকরির ক্ষেত্রেও নিজেকে এগিয়ে রাখে। কোরিয়াতে সম্মানের চাকরির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাব বিস্তারকারী পরিবারগুলোর কোম্পানি। এদেরকে ‘চেবল’ বা ধনী গোষ্ঠী বলা হয়। স্কাই কোরিয়ানদেরকে এখানে পৌঁছাতে অনেকটুকু এগিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি।