ত্বকের বিষয়ে কোরিয়ানদের জ্ঞান এবং দক্ষতা যথেষ্ট উন্নত। সেই ১৮ শতক থেকেই নিজেদের প্রসাধনী সামগ্রীর সাহায্যে পুরো বিশ্বের বুকে আধিপত্য বিস্তার করছে তারা।
Korean beauty
রূপচর্চায় কোরিয়ান নারীরা অনেক এগিয়ে

“জেন জি” দের কাছে বর্তমানে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে কে–বিউটি প্রোডাক্টস, একটু বয়স্করা যাকে কোরিয়ান বিউটি প্রোডাক্ট নামে চিনেন। বিগত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বজুড়ে রূপচর্চায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই কোরীয় ধারা। কে- পপ বা কোরিয়ান চলচ্চিত্র এবং গানের জনপ্রিয়তার কারণেই কে-বিউটি এত আলোচনায় এসেছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে কোরিয়ানদের সৌন্দর্যের এই ইতিহাস বেশ পুরোনো।

১৮ শতকের শেষ দিকে “কোরিয়ান বিউটি” ধারণার উৎপত্তি ঘটে। সেসময় পশ্চিমা ফ্যাশন এবং কোরিয়ান কালচারের সংমিশ্রণ হয়। এরপর ১৯ শতকের শুরুর দিকে কোরিয়ান মেকআপ এবং প্রসাধনসামগ্রীর জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ১৮৮০ থেকে ১৯০০ পর্যন্ত এই সময়টিতে বিশ্বব্যাপী সৌন্দর্যের যে সংমিশ্রণ ঘটেছিল তা গেয়ংসিওনশি-ডে (경서시대) নামে পরিচিত।

chardike-ad

১৯২০ সালে জাপানের বিভিন্ন বিউটি প্রোডাক্ট কোরিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের কাজ শুরু করে। ১৯৫০ সালের ২৫শে জুন জাপান-কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে বাধা পায় জাপানি বিউটি প্রোডাক্টের প্রসারণ। ১৯৫০ সালে আমেরিকান সামরিক প্লাস্টিক সার্জন ড. ডি. রাল্ফ মিলার্ডের হাত ধরে কোরিয়ায় প্লাস্টিক সার্জারির ভিত্তি স্থাপিত হয়। তিনি যুদ্ধের কারণে সেসময় কোরিয়াতে অবস্থান করছিলেন।

korean-beautyএসময় কোরিয়ান সৌন্দর্যে পশ্চিমা প্রভাব বেশ পরিলক্ষিত হয়। লম্বা চুলের পরিবর্তে কোরিয়ান নারীরা এসময় ছোট চুল এবং উজ্জ্বল মেকআপ ধারণ করে যা পশ্চিমা ফ্যাশনেরই প্রভাব। এই ধারা চলে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ১৯৬০ সালের পরে কোরিয়াতে বিদেশি পণ্য কেনাবেচার ওপর আইনগতভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে কোরিয়ান বিউটি প্রোডাক্ট তাদের হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পায়। সেই থেকে শুরু হয় কোরিয়ান বিউটি প্রোডাক্টের রাজকীয় যাত্রা।

ত্বকের বিষয়ে কোরিয়ানদের জ্ঞান এবং দক্ষতা যথেষ্ট উন্নত। সেই ১৮ শতক থেকেই নিজেদের প্রসাধনী সামগ্রীর সাহায্যে পুরো বিশ্বের বুকে আধিপত্য বিস্তার করছে। কোরিয়ার রূপচর্চায় সাধারণত প্রাকৃতিক উপকরণ , যেমন ক্যামেলিয়া ফুল, মুগডাল, ভাত, চালধোয়া পানি, অ্যালোভেরা, মাগওয়ার্ট নির্যাস, যষ্টিমধু, বেদানা, বাঁশের নির্যাস, জিনসেং ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

কোরিয়ান এই সৌন্দর্যবর্ধনের প্রক্রিয়ায় সাধারণত ১০টি ধাপ অনুসরণ করা হয়। এগুলো হলো- ক্লিনজার, টোনার, স্ক্রাব বা এক্সফোলিয়েটর, এসেন্স, সিরাম বা অ্যাম্পুলিস, শিট মাস্ক, ময়েশ্চারাইজার, আই ক্রিম এবং সানস্ক্রিন।এগুলোর মাধ্যমে কোরিয়ানরা তাদের বিউটি প্রোডাক্টের বাণিজ্যিক বিস্তার ঘটায় যা বর্তমানে সারাবিশ্বে ত্বকের সৌন্দর্যবর্ধনে কাজে লাগছে।