দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী বৃদ্ধির জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে:
বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ক সরকারি নীতিতে পরিবর্তন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তি বাড়ানো, বিদেশি শিক্ষকদের—বিশেষ করে বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, বিদেশি শিক্ষার্থীদের পার্ট টাইম চাকরির সময় বাড়ানো এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা সমাপ্তির পর অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করার সুযোগ রেখে ভিসানীতিতে পরিবর্তন ইত্যাদি।
সরকারি আইন অনুযায়ী, এতোদিন দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের কোরীয় ভাষায় দক্ষতা সম্পর্কিত একটি পরীক্ষা দিতে হতো। যেটিকে ইংরেজিতে টপিক (টেস্ট অব প্রফিশিয়েন্সি ইন কোরিয়ান) বলা হয়। সেই পরীক্ষায় পাশের হার যদি ৩৫ শতাংশের নিচে হতো, তাহলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতো। সাম্প্রতিক সময়ে সেই আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী, বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবশ্যই দক্ষিণ কোরিয়ার ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ বিষয়ে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করবে। সেই সাথে টপিক পরীক্ষাও একটি বিচ্ছিন্ন পরীক্ষা হিসেবে স্বীকৃত হবে এবং যে সকল বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে ডিগ্রি অর্জন করবেন, তাঁদের অবশ্যই টপিক পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। এর সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরাসরি সম্পর্ক থাকবে না। সেই পরীক্ষা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে।
নিম্ন জন্মহার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশে মেধা পাচার হয়ে যাওয়ার ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছরই শিক্ষার্থী সংকট বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিভিত্তিক বিষয়গুলোতে।
এমনকি বিদেশি শিক্ষার্থীদের দিয়েও এই সংকটের সুরাহা হচ্ছে না। বর্তমান দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যতো বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন, তাঁদের শতকরা প্রায় ৬৮ শতাংশই ভিয়েতনাম, চীন ও উজবেকিস্তানের নাগরিক। সরকারি জরিপে দেখা গেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক বিষয়গুলোর চেয়ে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে আগ্রহ বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকেও শিক্ষার্থীদের মাঝে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইমিগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২০৯৪ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী দক্ষিণ কোরিয়া গেছেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর ১১৫০ জন, ২০২০ সালের ডিসেম্বর ১৩২০ জন এবং ২০২১ সালে ডিসেম্বরে ১৪৪০ জন শিক্ষার্থী দক্ষিণ কোরিয়া গমন করেছে । চলতি বছর এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিজ্ঞানে আকর্ষণ করতে বৃত্তির ব্যবস্থা করেছে সরকার। প্রতিবছর এসব বিষয়ে অধ্যয়নরত ২ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই কাজ চলবে।
এই বৃত্তির প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নন, এমন ছয় হাজার জনকেও বৃত্তির আওতায় সহায়তা দেওয়া হবে। বৃত্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন ও বৃত্তির পুরো ব্যাপারটি দেখভাল করবে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি তহবিল গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপ প্রোগ্রাম।