দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের কোটার বিপরীতে গমনেচ্ছু প্রার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে। আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ হাজার প্রার্থীর কোটা পূরণে গত ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি দুই দিন সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে এই কোটা পূরণ হয়েছে। চলতি বছর দেশটির শ্রমবাজারে ১০ হাজার কর্মী পাঠানোর কোটা পেয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর কোটা ছিল সাত হাজার।
গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
দক্ষিণ কোরিয়া যেতে আগ্রহী প্রার্থীরা বেশির ভাগই তরুণ। তাঁরা মনে করছেন, এই শ্রমবাজারে যেতে পারলে অল্প সময়ে বেশি টাকা আয় করা যাবে। এ জন্য আবেদনের সুযোগ পেয়ে খুব দ্রুত তাঁরা সাড়া দিয়েছেন। অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই আগ্রহ ও চেষ্টার কারণে বাংলাদেশের জন্য এটি বড় শ্রমবাজার হয়ে দাঁড়াতে পারে।
২০০৮ সাল থেকে এই শ্রমবাজারে কর্মী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। বোয়েসেলের এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) আওতায় সেখানে কর্মী পাঠানো হয়। শুরুর দিকে তেমন কর্মী না গেলেও বর্তমানে এই শ্রমবাজারের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে ১০ হাজার কর্মীর কোটা পায় বাংলাদেশ। এই প্রথম উৎপাদন ও জাহাজ শিল্প ছাড়াও নির্মাণ ও মৎস্য শিল্পে কর্মী পাঠানোর কোটা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই ১০ হাজার কর্মীর মধ্যে সাড়ে সাত হাজার উৎপাদনশিল্পে, ৩০৪ জন জাহাজশিল্পে, এক হাজার ৮৭৭ জন মংস্যশিল্পে ও এক হাজার ৯৫ জনকে নির্মাণশিল্পে নেওয়া হবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ করতে যেতে আগ্রহীদের কোরিয়ার ভাষা ও দক্ষতার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হয়।
বোয়েসেল সূত্রে জানা যায়, কর্মীরা ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী আবেদন করেন। এর মধ্যে উৎপাদনশিল্পে ১৭ হাজার ৪৬০ জন, জাহাজশিল্পে এক হাজার ১৬৪ জন, মৎস্যশিল্পে সাত হাজার ৭৬০ জন ও নির্মাণশিল্পে চার হাজার ২৬৮ জন প্রার্থী রয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার বোয়েসেল দপ্তরে গিয়ে সকাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে আগ্রহী কর্মীদের আসতে দেখা যায়। প্রক্রিয়া জেনে তাঁরা নিবন্ধন করেন। বেশির ভাগ কর্মী জানান, তাঁরা উৎপাদন ও মংস্য শিল্পে কাজ পেতে আবেদন করছেন।
আবেদনের জন্যও প্রয়োজন যোগ্যতা
দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ পেতে বেশ কিছু যোগ্যতা থাকতে হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো কর্মীকে কোরিয়ান ভাষা বুঝতে, বলতে, পড়তে ও লিখতে পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। এসএসসি পাস কর্মীরাই শুধু আবেদন করতে পেরেছেন। ১৮ বছরের নিচে ও ৩৯ বছরের ওপরের কেউ আবেদন করতে পারেননি। যে খাতে কর্মীরা আবেদন করেছেন, সেই খাতে প্রশিক্ষণসহ বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
বোয়েসেলের তথ্য মতে, উল্লিখিত যোগ্যতা ছাড়াও প্রার্থীকে বর্ণান্ধ বা রং বোঝার সক্ষমতার সমস্যামুক্ত থাকতে হবে। পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ ও কথোপকথনে মার্জিত হতে হবে। কর্মীকে অবশ্যই মাদকমুক্ত থাকতে হবে। কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধে জেল বা অন্য কোনো শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেতে পারবেন না। দক্ষিণ কোরিয়ায় আগে অবৈধ প্রক্রিয়ায় গিয়ে থাকলে এখন আর আবেদন করতে পারবেন না। আবেদন করলেও তা বাতিল হবে। প্রার্থীরা যেকোনো একটি ধাপে আবেদন করতে পারবেন। কোনো প্রার্থী দুই ধাপে আবেদন করলে তাঁর নিবন্ধন বাতিল বলে গণ্য হবে। দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকা ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারবেন না। কোরিয়ায় পাঁচ বছরের বেশি অবস্থানকারীরা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকরির লক্ষ্যে ভাষা নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
তিন ধাপে কর্মী বাছাই
দক্ষিণ কোরিয়ায় তিন ধাপে কর্মী বাছাই করা হয়। প্রথমে কর্মীকে আবেদন করতে হয়। আবেদনে সব ধরনের যোগ্যতা অর্জন করা কর্মীরা কোরিয়ান ভাষার ওপর পরীক্ষা দিতে পারেন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর রয়েছে দক্ষতার পরীক্ষা। এতে উত্তীর্ণ হলেই দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার সুযোগ মেলে। বোয়েসেল বলেছে, কর্মীদের ভাষা পরীক্ষায়ই মূল সমস্যা তৈরি হয়।
তরুণদের এই আগ্রহ ধরে রাখতে সরকারিভাবে এর কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারি মাধ্যমে কর্মী পাঠানো হয়। মোটামুটি দক্ষরাই সেখানে নানা ধরনের কাজের জন্য যাচ্ছেন। সেখানে নানা ধরনের ভালো সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তরুণদের মধ্যে আগ্রহও বাড়ছে। এটি ধরে রাখতে সরকারিভাবে এই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।’
বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ইপিএসের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ নির্বাচিত ১৬টি দেশ থেকে মাঝারি ও স্বল্প দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগ করছে। এই শ্রমবাজারের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে।’
লেখকঃ তৌফিক হাসান