Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ancient-cityবিশ্বে এখনো কিছু নগরী আছে, যা অনেক পুরাতন। কিন্তু এখনো মানুষ বসবাস করে। সে মানব সভ্যতা থেকে এই পর্যন্ত অনেক শহর বিলুপ্ত হয়েছিলো। কিন্তু এখনো কিছু শহর বেঁচে আছে হাজার বছর ধরে। আমি আজ এই সব প্রাচীন শহর নিয়ে লিখতে বসছি।

কায়রো: বিশ্বে দশম জনবহুল শহর কায়রো, মিশরের রাজধানী। প্রাচীন কাল থেকে এ শহরের মানুষ বসবাস শুরু করে। নীল নদের তীরে গড়ে ওঠা এ শহরের সূচনা হয় একেবারে প্রস্তর যুগে। জলপথে যোগাযোগ স্থাপনের সুবিধার্থে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই অঞ্চলটি। কিন্তু এটি সত্যিকারের উন্নতির মুখ দেখে প্রথম ফারাও মেনেস-এর সময়ে। বিংশ শতাব্দীতে এসে সেতু বাঁধ নির্মাণ শুরু করে কায়রোতে। এসব উন্নতির কারণে এই নগরীর জনসংখ্যা বাড়তে বাড়তে এক মিলিয়ন হয়ে যায়। বর্তমানে এখানে ১ কোটি ৮৪ লাখ ১৯ হাজার মানুষ বসবাস করে। ১৯৫২ সালে মিসরীয় বিপ্লবের সয় কায়রো এবং পুরো মিশরেই ঔপনিবেশিক শক্তির পতন ঘটে। এরপর থেকেই লোকজন মিশরে আসতে শুরু করে তখন থেকে কায়রো আরো বড় করে তোলে।

chardike-ad

ইস্তাম্বুল: প্রাচীনকাল থেকেই তুরষ্কের শহর ইস্তাম্বুল দুই মহাদেশের শহর হিসেবে পরিচিত। আড়াই হাজার বছর পুরনো এই শহরটিকে বলা চলে একটি কিংবদন্তী। এশিয়া ও ইউরোপ একত্রে বলা হয় ইউরোশিয়া, যার বিভাজন রেখা হলো বসফরাস, বসফরাস প্রণালির অবস্থান এই শহরে। শহরটি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর একটি শহর। ইস্তাম্বুল ইউনেস্কোর তালিকায় ইউরোপের রাজধানী শহরের মর্যাদা পেয়েছিলো ২০১০ সালে। এই শহরটি একমাত্র শহর যার ভৌগোলিক অবস্থান দুটি মহাদেশে। পরিকল্পিত শহরটি দেখতে জাদুর মতো। একসময় ইস্তাম্বুলই ছিলো পৃথিবীর শাসনকারী অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী। বিখ্যাত নেপোলিয়ান বোনপার্তি বলেন, “গোটা পৃথিবীকে যদি রাজ্য ভাবা হয়, ইস্তাম্বুল হবে তার রাজধানী।”

দামেস্ক: দামেস্ক সিরিয়ার রাজধানী। প্রায় ১২,০০০ বছর ধরে মানুষের বসতির চিহ্ন মেলে এখানে। তাই অনেকে দাবি করেন দামেস্কই হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম শহর। আলেকজান্ডার দি গ্রেট থেকে শুরু করে খালেদ ইবনে ওয়ালীদের মতো অসাধারণ সব বিশ্বজয়ী ইতিহাসসমৃদ্ধ দামেস্কের মাটিতে। আর তাই সভ্যতার প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতুহাস নিয়ে আলোচনা হবে কিন্তু সিরিয়ার রাজধানী নাম দামেস্ক ওঠে আসবে না সেটা কল্পনা করাও দুরূহ ব্যাপার। অনেকের ধারণা খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০০ সালে এ শহরে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। শহরটিকে ইসলাম ধর্মের ইতিহাস বিশেষত্ব বহন করে। এই দেশের জনসংখ্যা ১৭ লাখ।

সাংহাই: বিশ্বের তৃতীয় জনবহুল শহরের তালিকায় নাম রয়েছে চীনের সাংহাই। এটি ৯০০ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠা করা হলেও এর রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। ৬০০০ বছর আগে এখানে জনবসতি স্থাপন করা হয়। বর্তমানে শহরটিতে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ সালে সাংহাইয়ের জনসংখ্যা ২ কোটি ৩০ লাখের মতো। ১৯৯০ সালে এর জনসংখ্যা ছিলো প্রায় ৭৮ লাখ। জীনের সবচেয়ে বড় শহর সাংহাই গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল হাব হিসেবে পরিচিত লাভ করে। ২০১৬ সালে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারের সূচিতে ২০১৬ সালের সাংহাই অবস্থান ১৬ তম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর সাংহাই।

এথেন্স: গ্রিক সভ্যতার সূচনালগ্নে অনেক পাহাড়ের কারণে গ্রিস ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। যার ফলে অনেকগুলো নগররাষ্ট্র তৈরি হয়। গ্রিসের মূল ভূখণ্ড ছিলো এথেন্স, থিবস ও মেগারা, পেলোপনেসাস অঞ্চলে ছিলো স্পার্টা ও কোরিন্থ। এশিয়ার মাইনরের তীরে ছিলো মিলেটাস। এদের নেতৃত্বে ছিলো গ্রিসের খ্যাতনামা শহরের এথেন্স। পর্যটকদের আর্কষণের শীর্ষে শহরটি প্রায় ৩৫০০ বছরের পুরোনো। এই শহরটিকে বলা হয় গণতন্ত্রের জন্মশহর। এই শহরের পরতে পরতে মেখে আছে মহাবীর ও জ্ঞানীদের পদচারণন। রয়েছে নানা মিথ। আছে নানা কালে ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই শহর সম্পর্কে আলেকজান্ডার দি গ্রেট বলেন, “How great are the danger I face to win a good name in Athens.”

আর্বিল: আর্বিল উত্তর ইরাকের অতি প্রাচীন শহর যা আর্বিল প্রদেশের রাজধানী। মসুল শহরের কাছে অবস্থিত আর্বিল প্রায় ৪ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো। সুমেরীয়রা খ্রিষ্টপূর্ব ২৩০০ অব্দে শহরটি প্রতিষ্ঠা করে। সুমেরীয়রা শহরটিকে উর্বিলুম নামে ডাকত। শহরটি ইতিহাস শুরু থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। আর্বিলের কাছে গাউগামেলা নামের এক গ্রামে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩১ অব্দে মহাবীর আলেকজান্ডার পারস্যে রাজা তৃতীয় দারিউসকে পরাজিত করেন। এটি ইরাকের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ কুর্দি অধ্যুষিত শহর হিসেবে পরিচিত। ১৯৯০ সালে শুরুর দিকে শহরটিতে গৃহযুদ্ধ বাঁধে। পরে ১৯৯৬ সালে সাদ্দাম হোসেন গৃহযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ ও ৩০ হাজার সৈন্যের বহর পাঠান। এখানে প্রায় ৯ লাখ মানুষ বসবাস করে।

বৈরুত: বৈরুত লেবাননের রাজধানী ও প্রধান শহর। যার জনসংখ্যা ১৯ লাখ। লেবাননের এ প্রাচীন শহরটি ভূমধ্যসাগরের একটি উপদ্বীপে গড়ে ওঠেছিলো। এ শহরটিকে লেবাননের সর্ববৃহৎ ও প্রধান সমুদ্রবন্দর। তাই এই দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত লাভ করে। বৈরুতে অধীনে রয়েছে কিছু উপশহর। অটোমান সুলতান প্রথম সেলিম(১৫১২-১৫১৫) এর অধীনে অটোমানরা বর্তমানে লেবাননসহ সিরিয়া জয় করে। বৈরুতে অটোমান সময়কালের স্থানীয় ড্রুজ ইমির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিলো। তাদের মধ্ডে একজন, দ্বিতীয় ফখর-আল-দীন সতেরো শতকের গোড়ার দিকে এটি অটোমানদের কাছ থেকে সুরক্ষিত করেছিলেন, কিন্তু অটোমানরা ১৭৬৩ সালে এটি পুনরায় দখল করেছিলেন। জিজার পাশা ও আব্দুল্লাহ পাশার অধীনে অটোমানর আধিপত্য বিরুদ্ধে উত্তর যুগে বৈরুতে প্রায় ১০ হাজার জনসংখ্যার একটি ছোট শহর ছিলো।

জেরুজালেম: ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক শহর জেরুজালেম। বহু প্রাচীনকাল থেকেই ধর্মীয় গুরুত্ব মিশে রয়েছে এই শহরের সঙ্গে। মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের কাছে পবিত্র ভূমি বলে স্বীকৃত পেয়েছে জেরুজালেম। ধর্মীয়ভাবে মর্যাদাসম্পন্ন জেরুজালেমের রয়েছে বায়তুল মুকাদ্দাস। ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা এই অঞ্চলকে টেম্পল মাউন্ট নামেও ডাকে। জেরুজালেমে মুসলমানদের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ অবস্থিত, যা মুসলমানদের স্মৃতিবিজড়িত এবং সেখানে অনেক নবী ও সাহাবার কবর রয়েছে। খ্রিস্টানদের কাছে এই শহরের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। বেথেলহামে যিশুখ্রিষ্ট জন্মগ্রহণ করেন, এটা তাদের বিশ্বাস। এই বেথেলহাম জেরুজালেমের দক্ষিণাংশে অবস্থিত। এটি প্রায় ৫০০০ বছরে পুরানো সমুদ্রবন্দর। এর জনসংখ্যা প্রায় ৯ লাখ।

লেখক: এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন
শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ
সেশন: ২০২০-২১