Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

pakistan-electionহইহই পড়ে গেছে পাকিস্তানে। চিলের পেছনে ছুটতে ছুটতে এবার পুরো ‘কানটাই’ পেয়ে গেছে। ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে; দিনদুপুরে ডাকাতি হয়েছে; মাঝরাতে ছিনতাই হয়েছে কাপ্তানের (ইমরান খান) জয়- উড়ো খইয়ের মতো মানুষের মুখে মুখে ভেসে বেড়ানো অলিগলি-রাজপথের শোরের এবার শেকড় খুঁজে পেল পাকিস্তান। সরকারের উঁচু দরের আমলা- খোদ জেলা প্রশাসকের মুখেই বেজে উঠল গোমড় ফাঁসের বাঁশি! যা শোনা গেল তাতেই ‘কান গরম’। সাত চড়েও কথা না বলা ছাপোষা শ্রেণির নেহাত সাদাসিধে মানুষটিরও গায়ের রক্ত মাথায় ওঠার দশা! গদি দখলের ‘পানিপথে’ পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রদেশ পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডিতেই জোর করে ফেল করানো হয়েছে পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে সে কথাই বললেন রাওয়ালপিন্ডির ডিসি (কমিশনার) লিয়াকত আলী চাট্টা। ডন, সামা টিভি, পাকিস্তান টুডে, জিও নিউজ।

নির্বাচনে কারচুপি ইস্যুতে এদিন আগে থেকেই উত্তাল ছিল পাকিস্তান। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে পাকিস্তানের প্রায় সব শহরেই ছড়িয়ে পড়ে পিটিআইয়ের নির্বাচন বাতিলের স্লোগান। রাজপথের সেই গনগনে আগুনেই হঠাৎ ঘি ঢাললেন ডিসি চাট্টা।

chardike-ad

ভোট গণনায় কারচুপি হয়েছে স্বীকার করে বললেন, যেসব প্রার্থী ৭০ হাজার ভোটে জয়ের পথে ছিলেন আমরা তাদের ৫০ হাজার ভোটে নামিয়ে হারিয়ে দিয়েছি। আরও বললেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান বিচারপতিও এর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিলেন। শনিবার এ অভিযোগ স্বীকার করে পদত্যাগও করেন তিনি। এর ঘণ্টা কয়েক পরই গ্রেফতার। তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা গোপন রাখা হয়েছে। ডিসির এ ঘোষণায় স্বভাবতই বেকায়দায় পড়ে গেছে দেশটির সরকার। বিশেষ করে ‘সেনাগালিচায়’ সরকারের তখতে হেঁটে যাওয়া পিএমএর-এন ও পিপিপি জোট। সংসারের চৌকাঠে পা রাখতে না রাখতেই চোখে অন্ধকার নেমে এাসেছে সদ্য বাগদান হওয়া এ ‘জুটির’। কী হবে এখন? পালটে যাবে নাকি থমকে যাবে? নাকি ঝড়ো হাওয়ার মতো ‘মার্শাল ল’ ধেয়ে আসবে পাকিস্তানের আকাশে?

৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখনও সরকার গঠন করতে পারেনি বিজয়ীরা! ফল প্রকাশের বিড়ম্বনার জেরে শুরুর দিন থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফসহ (পিটিআই) বেশ কয়েকটি দল নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করে আসছে। জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে অন্তত ৮৫টি আসনে জালিয়াতি হয়েছে বলে দাবি করেছে পিটিআই। দলটির কেন্দ্রীয় তথ্য সেক্রেটারি রওফ হাসান বলেছেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভোট গণনা করে বিজয়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। কারচুপি করে তাদেরকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার সে অভিযোগই স্বীকার করে পদ ছাড়লেন আলী চাট্টা।

শনিবার রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একটি সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘আমি সমস্ত অন্যায়ের দায় নিচ্ছি। তবে শুধু আমি নই, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান বিচারপতিও এর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত। রাওয়ালপিন্ডি বিভাগে পরাজিত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে এমনটি করা হয়েছে। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, কারচুপি করার জন্য তার ওপর চাপ ছিল। এক পর্যায়ে তিনি আত্মহত্যার চিন্তাও করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি জনসাধারণের সামনে বিষয়গুলো উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। আজও নির্বাচনি কর্মীরা ব্যালট পেপারে জাল স্ট্যাম্প লাগিয়ে দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন আলী চাট্টা। আমলাতন্ত্রের কাছে এসব রাজনীতিবিদের জন্য কোনো ভুল না করার অনুরোধও জানিয়েছেন। বিভাগের রিটার্নিং অফিসারদের কাছে ক্ষমাও চেয়ে বলেছেন, ‘আমরা দেশের প্রতি অন্যায় করেছি। আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।

তবে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) কমিশনার লিয়াকত আলী চাথার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচনি কর্তৃপক্ষের এক প্রেস বিবৃতিতে বলেছে, কমিশনের কোনো কর্মকর্তা ফলাফলের হেরফের সম্পর্কে তাকে কোনো নির্দেশ দেননি। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি বিষয়টির কঠোর নোটিশ দেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও প্রকৃত ঘটনা সামনে আনতে আলী চাট্টার অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

লিয়াকত আলী চাট্টার অভিযোগের প্রমাণ চাইলেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) কাজী ফয়েজ ইসাও। চাট্টাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনি ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। আপনার অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। কারণ আপনি প্রমাণ পেশ করেননি। আপনি চাইলেই অভিযোগ করতে পারেন। এটা আপনার অধিকার। কিন্তু অবশ্যই প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন তত্ত্বাবধায়ক তথ্যমন্ত্রী আমির মীরও। জিও নিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেছেন, এটি কোনো অপরাধের স্বীকারোক্তি নয়। এটি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার একটি পদক্ষেপ। মীর আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি আত্মহত্যার কথা বলে সে কেবল একজন সাইকোপ্যাথ। আলী চাট্টার বিরুদ্ধে একের পর এক প্রশ্নও তোলেন মীর। বলেছেন, যদি এমনটি হয়েই থাকে তবে তিনি নির্বাচনের দিন কেন বেরিয়ে আসেননি? নির্বাচনের ৯ দিন পর কেন? তদন্তের বিষয় তুলে ধরে আরও বলেছেন, বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার আগে চাট্টার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তদন্ত করা হবে। এই ধরনের একজন ব্যক্তিকে কীভাবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হলো তা নিয়েও তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন মীর। পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) সিনিয়র নেতা রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, চাট্টা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। মানসিক সমস্যার জন্য চাট্টার চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তদুপরি পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা শেরি রেহমান বলেছেন, গুরুতর এ অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত।

কমিশনারকেও তার অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। কারণ তিনি কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। চাট্টার স্বীকারোক্তি নিয়ে পিটিআই নেতা আলী মুহাম্মদ খান বলেছেন, রাওয়ালপিন্ডি কমিশনার আজ একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার অভিযোগ প্রমাণ করে পিটিআইয়ের ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে তার ভুল সংশোধন করে তাদের (পিটিআই) ম্যান্ডেট ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আলী। খান বলেছেন, আমরা প্রায় ১৬০-১৭০ আসন জিতেছি। আমরা নকভির তদন্তের বিশ্বাস করি না। কারণ তার নাকের নিচে সবকিছু ঘটেছে। ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ক্রমশ বেড়েই চলেছে পাকিস্তানে। বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলাকালীন পাঞ্জাবের দক্ষিণে আবারও বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই।

নাগানা চক, মুলতান ফরিদ গেট, বাহাওয়ালপুর-ট্র্যাফিক চক ও দেরা গাজি খান শহরে অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছে দলটি। এদিকে বিক্ষোভ ঠেকাতে রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পাকিস্তানের দৈনিক পত্রিকা পাকিস্তান টুডে জানিয়েছে, জেলাজুড়ে টহল বাড়ানো হয়েছে। চেকপয়েন্টগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বিরোধী দল হবে পিটিআই: সরকারে নয়, বিরোধী দলে বসতে প্রস্তুত পিটিআই। তবুও জোটে যেতে রাজি নয় দলটি। পিটিআই ফেডারেল স্তরে এবং পাঞ্জাবে উভয় ক্ষেত্রেই বিরোধীদের ভূমিকা গ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ইসলামাবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে, কওমি ওয়াতান পার্টির নেতার সঙ্গে পিটিআই নেতা ব্যারিস্টার সাইফ ঘোষণা করেছেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমরান খানের নির্দেশনায় বিরোধী দলে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।