Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

korean-educationবিপুল সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী টানতে পাঁচ বছরের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিউল। প্রতি বছর আগত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখে উন্নীত করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনাও নিয়েছে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ক সরকারি নীতিতে পরিবর্তন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তি বাড়ানো, বিদেশি শিক্ষকদের—বিশেষ করে বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, বিদেশি শিক্ষার্থীদের পার্ট টাইম চাকরির সময় বাড়ানো এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা সমাপ্তির পর অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করার সুযোগ রেখে ভিসানীতিতে পরিবর্তন। খবর দ্য কোরিয়া হেরাল্ড।

সরকারি আইন অনুযায়ী এতদিন দক্ষিণ কোরিয়ার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের কোরীয় ভাষায় দক্ষতা সম্পর্কিত পরীক্ষা দিতে হতো। টেস্ট অব প্রফিশিয়েন্সি ইন কোরিয়ান (টপিক) নামের সেই পরীক্ষায় পাসের হার যদি ৩৫ শতাংশের কম হতো। এ পরীক্ষার বাধ্যবাধকতায় খানিকটা শিথিলতা আনছে দেশটি। সেই সঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীরা কীভাবে এই ভাষায় ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিতে সুযোগসুবিধা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

chardike-ad

korean-studentসম্প্রতি সেই আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তিত আইন অনুযায়ী, বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবশ্যই দক্ষিণ কোরিয়ার ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করবে। সেই সঙ্গে টপিক পরীক্ষাকেও বিচ্ছিন্ন একটি পরীক্ষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে ডিগ্রি নেবেন, তাদেরকে অবশ্যই টপিক পরীক্ষায় পাস করতে হবে। এর সঙ্গে আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরাসরি কোনো সম্পর্ক থাকবে না।

নিম্ন জন্মহার এবং প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মেধা পাচার হয়ে যাওয়ার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমনিতেই শিক্ষার্থী সংকট দিন দিন বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিভিত্তিক বিষয়গুলোতে।

এমনকি বিদেশি শিক্ষার্থীদের দিয়েও এ সংকট কমানো যাচ্ছে না। বর্তমানে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যত বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন, তাদের ৬৮ শতাংশই চীন, ভিয়েতনাম ও উজবেকিস্তান— এই তিন দেশের। সরকারি জরিপে দেখা গেছে, গড়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিভিত্তিক বিষয়গুলোর চেয়ে মানবিক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে আগ্রহ বেশি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রোকৌশল, চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোতে আকর্ষণ করতে বৃত্তির ব্যবস্থা করেছে সরকার। প্রতি বছর এসব বিষয়ে অধ্যয়নরত ২ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হবে। বৃত্তির জন্য যোগ্য শিক্ষার্থী নির্বাচন ও বৃত্তি প্রদানের পুরো ব্যাপারটি দেখভাল করবে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি তহবিল গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপ প্রোগ্রাম।

korean-forien-studentদক্ষিণ কোরিয়ায় অবশ্য প্রতি বছরই বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ২০২০ সালে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে গিয়েছিল দেশটিতে। করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে এই সংখ্যা খানিকটা হ্রাস পেয়ে নেমে আসে ১ লাখ ৫২ হাজার ২৮১ জনে। পরে ২০২২ সালে এই সংখ্যা ফের বেড়ে পৌঁছায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৯২ জনে।

কিন্তু তারপরও এতে সন্তুষ্ট নয় দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। কারণ এই খাতে দেশটির সবচেয়ে বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের গমনের হার এখনও অনেক বেশি।

এর বড় দু’টি কারণ হলো— জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে ডিগ্রি অর্জনের পর ওই দু’টি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ রয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের। যাদের স্থায়ী বসবাসের পরিকল্পনা নেই, তারাও চাইলে শিক্ষা সমাপ্তির পর দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারেন।

এতদিন দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এসব সুবিধা ছিল না। তবে শিগগিরই ভিসা নীতি সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী লি জু হো।

মন্ত্রী বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রযুক্তিগত দিকে সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতা ততই বাড়ছে। আমরা কোনো দেশ থেকে পিছিয়ে থাকতে চাই না। এ কারণে আমরা ব্যাপকভাবে চাইছি— বাইরের বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা আরও অধিক হারে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোতে পড়তে আসুক।’

‘যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো আগামী ৫ বছরে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।’ বর্তমানে দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীর ৬৮ শতাংশই চীন, ভিয়েতনাম এবং উজবেকিস্তানের নাগরিক।