যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিচালনার জন্য প্রথম প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু শক্তি ক্ষেত্রে সিনিয়র রিয়েক্টর অপারেশন্স (এসআরও) সার্টিফিকেট পেয়েছেন রায়হান খন্দকার।
২০১৯ সাল থেকে ২১ মাসের দীর্ঘ ট্রেনিং এবং চূড়ান্ত পরীক্ষার পর খুলনার কৃতী সন্তান রায়হানকে সার্টিফিকেট দেয়া হয় নভেম্বর মাসে। এই সার্টিফিকেটের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পারমাণবিক ক্ষেত্রে এ ধরনের যোগ্যতায় এবং পদে ভূষিত হওয়ায় বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করলেন।
সিনিয়র রিয়েক্টর অপারেশন্স (এআরও) প্রত্যয়িত ব্যাক্তিরা কমার্শিয়াল পারমাণবিক কেন্দ্র অপারেশন্সে দক্ষ হয়ে থাকেন। একটি পারমাণবিক রিয়েক্টর নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা এবং তাদের অধীনে সব রিয়েক্টর পরিচালক আর অন্যান্য ব্যক্তি সকলের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নির্দেশনার উদ্দেশ্যে একজন ব্যাক্তিকে এসআরও দেয়া হয়ে থাকে। একজন এসআরও একটি নিউক্লিয়ার প্লান্ট এর সব ধরনের পারমাণবিক পরিচালনার জন্য দায়ী (নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তার মধ্যে) থাকেন। তারা সব পারমাণবিক চুল্লির (রিয়েক্টর) এর তেজস্ক্রিয় জ্বালানী পরিবর্তন সম্পাদন করারও সার্টিফিকেট প্রাপ্ত। এছাড়া এসআরও সার্টিফিকেটধারী (সমুদ্রের নিউক্লিয়ার সাবমেরিন মতো) খুব কঠোর ট্রেনিং প্রোগ্রামে উত্তীর্ণ হতে হয়। এই ট্রেনিং বিভিন্ন ফেজে হয়ে থাকে।
প্রথম ফেজ এ তাদের পারমাণবিক কৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎকৌশলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এরপর নিউক্লিয়ার প্লান্ট পরিচলনায় জন্য যত ধরনের সিস্টেম আছে তার উপর বিস্তারিত পরীক্ষা দিতে হয়। এরপর শুরু হয় স্বাভাবিক অপারেশনের ট্রেনিং, তারপর অস্বাভাবিক অপারেশন ট্রেনিং, জরুরী অপারেশন ট্রেনিং, রিয়েক্টর স্টার্টআপ এবং শাটডাউন, ক্ষণস্থায়ী দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ, রিয়েক্টর মূল ক্ষতি প্রশমন ট্রেনিং, আর সিমুলেটর ট্রেনিং। এর সঙ্গে আরো অন্তত ৬০০ ঘন্টা একটা নিউক্লিয়ার প্লান্ট এর কন্ট্রোল রুম অপারেশন্স সুপারভাইসর হিসেবে “সহ-পাইলট” এর মতো এক্সপেরিয়েন্স এবং পারমাণবিক প্রতিক্রিয়াশীলতা ব্যবস্থাপনা করতে হয়। এই সব কিছুর পর সব কিছুর উপর ভিত্তি করে চার সপ্তাহের কঠোর পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষা শুধু লিখিত নয়, সিমুলেটর ও বিভিন্ন অনুসদয় এবং বিশ্লেষিত দৃশ্যপটের উপর ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়।
অত্যন্ত শ্রমসাধ্য প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সিনিয়র রিয়েক্টর অপারেশেন্স (এসআরও) প্রত্যায়িত ব্যক্তিরা নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট পরিচালনার সনদ পেয়ে থাকেন। এ সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিউক্লিয়ার এনার্জির জগতে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এবং অবস্থানে কাজ করেন এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা পালন করেন।
রায়হানের প্রেরণা বাংলাদেশের আরেক গৌরব বাংলাদেশি-আমেরিকান স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার এবং স্থপতি ফজলুর রহমান খান, যাকে স্থাপত্য জগতের আইনস্টাইন বলা হয়ে থাকে। রায়হান বলতেন, “আমিও এমন কিছু করব যাতে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হবে। সেটারই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আজীবন।… দেশ থেকে দূরে থেকেও দেশকে গর্বিত করতে চাই। ” রায়হান স্বপ্ন দেখেন তিনি দেশের জন্য আরো বড় কিছু করবেন।
রায়হানের জন্ম খুলনায়। ছেলেবেলায় খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এবং ঢাকার নটর ডেম কলেজে পড়াশোনা করেছেন। এছাড়া তিনি কানাডার রাজধানীর অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে কানাডা পরমাণু শক্তিতে অনেক বছর প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু শক্তিতে কাজ করতে টেক্সাসে চলে আসেন। টেক্সাস এএন্ডএম থেকে এমবিএ শেষ করেন। তিনি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে চিফ নিউক্লিয়ার অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে চান।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত রায়হান তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম ক্যাথরিন। তার বাবা ড. কে এম কাজিম খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র কৌশলের অধ্যাপক এবং ডিন ছিলেন। মা রীনা গুলশান আরা ছিলেন কবি , উপন্যাসিক এবং কলামিস্ট।
সূত্র: ঠিকানা