প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরে কিছুটা আতঙ্ক ভর করেছিল; কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই ওমানকে ২৬ রানে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে আজ পাপুয়া নিউগিনিকে ৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। বাংলাদেশের ছুড়ে দেয়া ১৮২ রান তাড়া করতে নেমে টাইগারদের বোলারদের তোপের মুখে পাপুয়া নিউগিনি অলআউট হয় ৯৭ রানেই। ফলে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসে বাংলাদেশ তুলে নিলো সবচেয়ে বড় জয়।
সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যের সামনেই মূলত উড়ে গেলো পাপুয়া নিউগিনি। ব্যাট হাতে ৪৬ রান করার পাশাপাশি বল হাতে তিনি নেন ৪ উইকেট। শুধু উইকেট নেয়াই নয়, সবচেয়ে কৃপণও ছিলেন তিনি। তার ৪ ওভার থেকে মাত্র ৯টি রান নিতে পেরেছে পাপুয়া নিউগিনির ব্যাটাররা। সাকিবের ঘূর্ণির সঙ্গে পাপুয়া নিউগিনির ব্যাটসম্যানদের সামনে ত্রাস হিসেবে হাজির হন সাইফউদ্দিন, তাসকিন এবং মেহেদী হাসানরা।
১৮২ রানের বিশাল লক্ষ্য। এত বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাপুয়া নিউগিনির ব্যাটারদের পিলে চমকে ওঠার কথা। ব্যাট করতে নেমে সেটারই প্রমাণ দিচ্ছে তারা। শুরু থেকেই সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ এবং সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ের সামনে রীতিমতো কাঁপতে শুরু করে বিশ্বকাপে নবাগত দেশটি।
প্রথম দুটি ওভার ভালোভাবেই মোকাবিলা করে পিএনজির ওপেনাররা। তৃতীয় ওভারে এসে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে এলবিডব্লিউ হন ওপেনার লেগা সিয়াকা। ১০ বলে ৫ রান করেন তিনি।
এরপর নুরুল হাসান সোহানের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হলেন পিএনজি অধিনায়ক আসাদ ভালা। তাসকিনের বল লেগ সাইড দিয়ে বের হওয়ার মুহূর্তে ব্যাটে খোঁচা দেন। সেই বলটি ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে তালুবন্দি করেন সোহান।
এরপর সাকিবকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওভারের প্রথম বলেই উইকেট নিলেন সাকিব। এবারও আরও একটি দুর্দান্ত ক্যাচ ধরলেন মোহাম্মদ নাইম। ২০ থেকে ২৫ গজ পেছনে গিয়ে লং অফে অসম্ভব এক ক্যাচ তালুবন্দি করেন নাইম। তাতে ফিরে যান চার্লস আমিনি। ওই ওভারের চতুর্থ বলে আবারও উইকেট নিলেন সাকিব। এবার শেখ মেহেদী হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সিমন আতাই। ২ বল খেলে কোনো রানই করতে পারলেন না তিনি। ১৪ রানের মাথায় পড়লো চতুর্থ উইকেট।
পরের বলে আবারও ক্যাচ। এবার ক্যাচ তুললেন সেসে বাউ। কিন্তু তার ক্যাচটি ফেলে দেন নুরুল হাসান সোহান। ৯ম ওভারে গিয়ে আবারও উইকেট পেলেন সাকিব আল হাসান। সেই সেসে বাউকেই এবার মোহাম্মদ নাইমের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন সাকিব। ২১ বলে ৭ রান করে ফেরেন সেসে। ২৪ রানে পড়লো পঞ্চম উইকেট।
নিজের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই উইকেটের দেখা পেলেন স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান। এবার বিদায় নিলেন নরম্যান ভানুয়া। স্কোরবোর্ডে কোনো রানই যোগ করতে পারেননি তিনি। নরম্যান স্লগ খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল উঠে যায় লং অফে। সেখানে ছিলেন মুশফিক। বল তালুবন্দী করতে কোনোই সমস্যা হয়নি। পাপুয়া নিউগিনিকে ২৪ রানে বসিয়ে বাংলাদেশ তুলে নিল ৬ষ্ঠ উইকেট। দলীয় ২৯ রানের মাথায় পড়লো ৭ম উইকেট। ১৫ বলে ৮ রান করা হিরি হিরি বিদায় নেন সাকিব আল হাসানের বলে নুরুল হাসানের ক্যাচে পরিণত হয়ে।
শঙ্কা জেগেছিল, ৫০ রানের মধ্যেই না আবার অলআউট হয়ে যায় পাপুয়া নিউগিনি। কিন্তু আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা কিপলিন ডোরিগা ৩৪ বলে খেলেন অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংস। তার এই ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করেই ৯০ এর ঘর পার হয়ে যায় পিএনজি। প্রায় একশ’র কাছাকাছি গিয়ে থামে তারা।
এরমধ্যে চাদ সপার ১২ বলে ১১ রান করেন। কাবুয়া মোরেয়া ৩ রানে রানআউট হয়ে যান। ড্যামিয়েন রাভু তাসকিনের বলে আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় পাপুয়া নিউগিনির ইনিংস। ১৯.৩ ওভারে ৯৭ রানে অলআউট হয়ে যায় পাপুয়া নিউগিনি।
সাকিব আল হাসানের ৪ উইকেট ছাড়াও ২টি করে উইকেট নেন সাইফউদ্দিন এবং তাসকিন নেন ২টি করে উইকেট। ১ উইকেট নেন মেহেদী হাসান।