উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া যদি তাদের ‘শত্রুতাপূর্ণ নীতি’ থেকে সরে আসে তবেই দেশটির সঙ্গে পুনরায় আলোচনা শুরু হতে পারে। আর এর মাধ্যমেই কোরীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টানা যেতে পারে। সম্প্রতি কোরীয় যুদ্ধের অবসানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন-এর আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বললেন।
কিম ইয়ো জং শুক্রবার বলেন, কেবল আলোচনার মাধ্যমেই অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে উভয়কে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। সিউলকে তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ, দ্বিমুখী নীতি ও সর্বোপরি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পরিহার করতে হবে। কেননা মুখে এককথা আর বাস্তবে অন্যভাবে কাজ করলে কোনো সমস্যার সমাধানই হবে না। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়াকে অনেক বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। ওয়াশিংটনের কাছে ভুল তথ্য দিয়ে পরিস্থিতি কোনোভাবেই ঘোলাটে করা যাবে না।
কিমের বোনের এ বক্তব্যের আরো একটি ইঙ্গিত রয়েছে। তা হচ্ছে সিউলের মাধ্যমে ওয়াশিংটনকে বুঝিয়ে তাদের ওপর থাকা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে আনা। কেননা দেশটিতে এখন অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক খারাপ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উত্তর কোরিয়ার মাথার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞার খড়গ তুলে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। আর এটুকু যদি ঠিকভাবে করতে পারে তাহলে দেশটি অনেকটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কিম ইয়ো বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া যদি তাদের কথাগুলো ঠিকমতো মেনে নেয় তাহলেও আলোচনার পথ সুগম হবে। আমরাও আলোচনায় প্রস্তুত থাকব। অন্যথায় সমস্যা আরো দীর্ঘতর হবে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের এক ভাষণে কোরীয় যুদ্ধ বন্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আহ্বান জানান দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। মুন বলেন, কোরীয় যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য ‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহযোগিতার জোর আহ্বান জানাচ্ছি।’ তার এমন আহ্বানকে এদিন এক বিবৃতিতে প্রশংসনীয় উল্লেখ করেছেন কিম ইয়ো।
দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আলোচনার আগে অবশ্যই দক্ষিণ কোরিয়াকে নেতিবাচক মনোভাব পরিহার করতে হবে। সমস্যা সমাধানে যথার্থ চেষ্টা করতে হবে। পুরোনো খারাপ অভ্যাস বদলাতে হবে। আমাদের আত্মরক্ষার অধিকারের ন্যায়সঙ্গত অনুশীলনকে দোষ দেওয়া চলবে না। এই শর্তগুলো পূরণ হলেই দুই পক্ষ মুখোমুখি বসে কোরীয় যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে পরিসমাপ্তি টানা সম্ভব।
১৯৫০ সালের ২৫ জুন শুরু হয় কোরীয় যুদ্ধ। ঐ সময় দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে উত্তর কোরীয় ট্যাংক ও সেনারা সীমান্ত অতিক্রম করে। যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ৭০ বছর আগের ঐ যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ায় নিহত হন কয়েক হাজার মার্কিন সেনা। এর তিন বছরের মাথায় একটি চুক্তি সইয়ের মধ্যে দিয়ে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় দুই দেশ। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কোরীয় যুদ্ধের এখনো ইতি টানা হয়নি।