আফগানিস্তানের আটকা পড়া বাংলাদেশি নাগরিকরা নিরাপদে ও ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন। কিন্তু তারা ভয়ে বিমানবন্দরে যাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) ‘বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড বাংলাদেশ : এন এপিক অব ন্যাশন’স ইমার্জেন্স অ্যান্ড ইমানসিপেশন’ শীর্ষক ওয়েবিনার শেষে শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আফগানিস্তানে আটকে পড়াদের জন্য বাংলাদেশ কোনো চার্টার্ড ফ্লাইট পাঠাবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, আমি এখনই এটার বিস্তারিত বলতে পারব না। তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রাইভেটলি যারা ওখানে আছেন, আমরা কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের বলেছিলাম, আপনারা সেফ জায়গায় চলে যান। অনেকেই এটা গ্রহণ করেছেন। কারণ আমাদের ধারণা ছিল যে, সমস্যা হতে পারে। যেহেতু আমাদের ওখানে দূতাবাস নেই, সুতরাং ‘মোর ডিফিকাল্ট’ হবে। কেউ কেউ শুনেছেন। আমরা তখন ব্র্যাককে অ্যাপ্রোচ করেছিলাম। তারা তাদের লোকগুলোকে মোটামুটি সেফলি নিয়ে এসেছে।
চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনের ১৬০ আফগান শিক্ষার্থী বাংলাদেশে ফিরতে চায় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তানের ১৬০ মেয়ে আমাদের এখানে পড়ে। শুনেছি তারা নিজ দেশে আছে, তারা এখন আবার বাংলাদেশে আসতে চাচ্ছে। তারা যদি নিজস্ব উদ্যোগে বাংলাদেশে আসতে পারে আমাদের দিক থেকে কোনো বাধা নেই, দুয়ার খোলা থাকবে। কিন্তু ‘দে হ্যাভ টু মেক দেয়ার ওয়ে আউট’। আমাদের তো ওখানে এমন কিছু নেই যে আমরা ওদের নিয়ে আসতে পারি।
জেনেভা সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জেনেভাতে যাচ্ছি, এলডিসির যে সামিট হবে সেখানে। এরপর আমি যাচ্ছি নেদারল্যান্ডস। সেখানে গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন নিয়ে রিজিওনাল সেন্টার আছে। আমি অ্যাডাপটেশন কমিটির একজন বোর্ড মেম্বার। বোর্ডের মিটিং হবে। সেখানে অনেক লোকজন থাকবেন। কোপ-২৬-এ আমরা কী অর্জন করতে চাই, সেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হবে। ২ সেপ্টেম্বর শেষ হবে জেনেভার সম্মেলন। মাঝের ওই অল্প সময়ের জন্য দেশে না ফিরে লন্ডনে যাব।
তিনি আরও বলেন, আজ আমি তাজ্জব হলাম শুনে, যুক্তরাজ্যে আমাদের হাইকমিশনার বললেন, ড. কামাল হোসেনই শেষ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের ফরেন মিনিস্টার হাউজে দেখা করেছিলেন, ১৯৭৪-এ। এরপর নাকি কেউ দেখা করেননি। এবার উনার সঙ্গে দেখা হবে। সেখানে অনেক ইস্যু আছে। তাছাড়া ক্লাইমেট ইস্যুটা আমাদের বড় ইস্যু। সুতরাং তাদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের বড় ইস্যু। তাদের সঙ্গে সব সময় আলাপ হচ্ছে, আরও আলাপ করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য কোনো কারণ ছাড়াই করোনা ইস্যুতে বাংলাদেশকে রেড অ্যালার্ট দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি লোক মারা গেছে ভারতে, অথচ তাদের রেড অ্যালার্ট দেয়নি।
এর আগে ওয়েবিনারে প্রধান অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিমের সভাপতিত্বে এবং মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী, এনডিসি, পিএসসি, টিই এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিআইআইএসএস প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড বাংলাদেশ : এন এপিক অব ন্যাশনস ইমার্জেন্স অ্যান্ড ইমানসিপেশন’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।