বাংলাদেশিদের জন্য আকাশপথে যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ইতালি। করোনার কারণে প্রায় ১৫ হাজার প্রবাসী ছুটিতে দেশে এসে গত ৮-১০ মাস ধরে আটকা পড়ে আছেন। তাদের জন্য অবশেষে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর এসেছে।
বাংলাদেশিদের জন্য ইতালিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১৪ অক্টোবর। এর আগে কয়েক দফায় এ মেয়াদ বাড়ানো হলেও এবার আর বাড়ছে না। বৃহস্পতিবার এই সুখবর দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ফলে ছুটিতে এসে আটকে পড়া প্রবাসীদের ফিরে যাওয়ার রাস্তা খুলল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইতালিতে যেসব বাংলাদেশির থাকার বৈধ অনুমতিপত্রের মেয়াদ আছে, তারাই শুধু দেশটিতে যেতে পারবেন। আর যাদের বৈধ অবস্থানের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের পুনরায় ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
জানা গেছে, লং স্টে পারমিট, সাধারণ স্টে পারমিট ছাড়াও রিসিট দিয়ে আসতে পারবে তবে অবশ্যই তাকে ৯ জুলাইয়ের আগে থেকে ইতালিতে নিয়মিত (রার্নিং) রেসিডেন্স থাকতে হবে। অন্যথায় তাকে ইতালি ইমিগ্রেশন ফিরিয়ে দিতে পারে।
ইতালিয়ান পুলিশের যাচাই-বাছাইয়ের পর আবেদনকারীদের ভিসা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ যেন দ্রুত তাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সেজন্য বাংলাদেশে ইতালির রাষ্ট্রদূত আশ্বস্ত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। তবে ইতালি এখনও নতুন ভিসার প্রদানের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করেনি।
এদিকে ইতালি প্রবাসীরা কাজে ফেরার দাবিতে গত ১১ অক্টোবর ঢাকার গুলশানে ইতালি দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন করেন। ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি ও ফ্লাইট চালুর দাবি জানান তারা। কয়েক মাস আটকে পড়ায় অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আয়হীন সময় কাটিয়ে অনেকেই ঋণগ্রস্ত।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নীতিমালা অনুসরণ করে গত ১৬ জুন থেকে সীমিত পরিসরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু হয়। কাতার এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ থেকে কাতার হয়ে বিভিন্ন দেশে যাত্রীদের নিয়ে যায়। এর মধ্যে অন্যতম গন্তব্য ছিল ইতালি।
গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে রোমে যাওয়া একটি ফ্লাইটের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যাত্রীর শরীরে কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ ধরা পড়ে। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে সবধরনের ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয় ইতালি। এরপর গত ৮ জুন বাংলাদেশ থেকে কাতার হয়ে ইতালিতে যাওয়া দুটি ফ্লাইটের ১৬৮ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে দেয় দেশটি।
গত ৭ জুলাই ভাড়া করে বিশেষ উড়োজাহাজে করে ইতালি যান প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সেখানে পৌঁছানোর পর ৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি।
এদিকে ৩০ হাজার ৮৫০ জন শ্রমিক নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইতালি সরকার। কৃষি, হোটেল ও ট্যুরিজমসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন এসব শ্রমিকরা।
দীর্ঘ ৮ বছর পর বাংলাদেশকে কালো তালিকামুক্ত করল ইতালি সরকার। এর ফলে দেশটিতে সিজনাল ভিসায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়।
এর মধ্যে কৃষি, হোটেল ট্যুরিজম সেক্টরে ৬ মাসের জন্য শ্রমিক নেয় ইতালি। ৬ মাস পর কাজের চুক্তি শেষে আবার তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে হয়। চলতি মাসের ১৩ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
যেসব দেশ থেকে শ্রমিক আসতে পারবে তার মধ্যে- বাংলাদেশ, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, দক্ষিণ কোরিয়া, আইভেরি কোস্ট, মিসর, এল সালভাদর, ইথিওপিয়া, ফিলিপাইন, গাম্বিয়া, ঘানা, জাপান, ভারত, কসোভো, মালি, মরক্কো, মরিশাস, মলডোভা, মন্টিনিগ্রো, নাইজার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া প্রজাতন্ত্র, সেনেগাল, সার্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন।
স্পিড আইডি ও অভিবাসী সার্ভিস কাপ অফিস থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন আবেদনকারীরা। এ বছর আবেদন করার পর অনেক যাচাই-বাছাই করার পর একজন শ্রমিক ইতালিতে বৈধভাবে আসতে পারবে।
সেজন্য একজন মালিক সঠিক কর প্রদান করে কিনা তা কঠোরভাবে দেখবে সরকার। তাই এ যাচাই-বাছাইয়ে অনেক আবেদন বাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিজ্ঞ অনেক অভিবাসী পরামর্শকরা মনে করেন।
উল্লেখ্য, অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশিরা সরকারের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করার কারণে দীর্ঘ আট বছর বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়। নিয়মানুসারে সিজনাল একজন শ্রমিক ছয়মাস কাজ করার পর তাকে নিজ দেশে অবশ্যই ফেরত যেতে হয়।