দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন পাবনার বকুল হোসেন (৩৫)। পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার শ্রীকোল গ্রামের মৃত মোজাম্মেল মোল্লার ছেলে বকুল হোসেন ২০০৭ সালের কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া যান। জমি বিক্রি করে এবং চড়া সুধে ঋণ নিয়ে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সুদের টাকা পরিশোধ ও পারিবারিক চাহিদা মেটাতে ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তার আর দেশে ফেরা হয়নি।
পরবর্তিতে মালয়েশিয়া সরকার রি-হেয়ারিং প্রগ্রাম চালু করলে অনেক অবৈধ প্রবাসীদের মতো বকুলও বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বকুলের কপালে আর মেলেনি মালয়েশিয়ায় থাকার বৈধ পারমিট। আর এই অবৈধ থাকার দুঃশ্চিন্তা এবং অনিয়মতান্ত্রিক চলাফেরার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন বকুল।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও তখন কোনো কাজ হয়নি। পরে কুয়ালালামপুর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা করার পর জানান, তার দুইটি কিডনিই ধীরে ধীরে ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে কিছুদিন চিকিৎসা নেয়ার পর একটু সুস্থ হলে আবার বাসায় ফেরেন বকুল।
একবার হাসপাতালে ভর্তি হলেই খরচ গুনতে হয় ৫ থেকে ৬ হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিত যা বাংলাদেশি টাকায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা।
মালয়েশিয়ায় থাকা বকুলের আত্মীয় আসলাম ও লোকমান হসেন জানান, বকুল হোসেনকে প্রায় ৭/৮ বার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে ৫০/৬০ হাজার রিংগিত যা ১০/১২ লাখ টাকা। আর এ টাকার যোগান দিতে দেশ থেকে জমি বিক্রি এবং ধার দেনা করতে হয়েছে। গত এক সাপ্তাহ হলো অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের বেডে পড়ে আছেন বকুল। জানি না আবার হাসপাতালের বিল কত আসবে?
লোকমান ও আসলাম জানান, আমরা বকুল হোসেনকে দেশে পাঠানোর জন্য মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দুতাবাসে অনেকবার যোগাযোগ করেছি কিন্তু ফ্লাইট না থাকায় তাকে দেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। মালয়েশিয়ায়ায় বাংলাদেশ দুতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করব তাকে যেন উন্নত চিকিৎসা এবং স্পেশাল ফ্লাইটের মাধ্যমে খুব দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে দেশে থাকা বকুলের মা পাগল প্রায়। ছেলেকে ফেরত চাইছেন তিনি। বকুলের স্ত্রী বলেন, আমার কোনো ছেলে সন্তান নেই শুধু তিনটি মেয়ে এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমার স্বামী। সে আজ ৫/৬ মাস ধরে অসুস্থ। জমি বিক্রি ও ঋণ করে তার চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়ায় টাকা পাঠাচ্ছি। এখন মেয়েদের মুখে তিন বেলা ভাত তুলে দিতেই আমি হিমসিম খাচ্ছি।
বকুলের মেয়েরা বাবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করেন এবং তাকে স্পেশাল ফ্লাইটের মাধ্যমে দেশে পাঠানোর অনুরোধ করেন।